ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় দেশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো টানাপোড়েন নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে হতে যাওয়া নির্বাচনে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে বলেও মনে করেন না তিনি।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
নির্বাচন নিয়ে বড় দেশগুলোর টানাপোড়ন কিংবা তলে তলে আপস হয়ে গেল কি না, প্রশ্ন রাখা হয় ড. মোমেনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, কোনো টানাপোড়েন নাই। কারণ, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু এবং সংঘাতহীন নির্বাচন করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তলে তলে কিছুই হয়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের বন্ধু। তারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। তাদের সঙ্গে আমাদের অনেক দিনের সম্পর্ক। আমেরিকার সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক। একাত্তরে আমেরিকা আমাদের বিপক্ষে থাকলেও যেদিন আমরা স্বাধীনতা পেলাম, তারপর থেকে আমেরিকা আমাদের প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করছে। সব সময় সমর্থন দিয়েছে। জাতিসংঘের সদস্য পদের জন্য ১৬টা প্রস্তাব আসে, ১৫টায় আমেরিকা আমাদের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভারত তো সব সময় আমাদের সহযোগিতা করে আসছে। এখনও সহযোগিতা করছে। তাদের সঙ্গে আমাদের সোনালি অধ্যায়। ইউরোপ আমাদের বড় বাজার। তারা যদি আমাদের অপছন্দ করত আমাদের জিনিস কিনত না। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) লেবারের অবস্থা ভালো করতে চান, আমরা স্বাগত জানাই। তবে সেটা বাস্তব হতে হবে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো আপত্তি জানালেও হঠাৎ করে চুপ হয়ে যাওয়া কূটনৈতিক সাফল্য কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের নীতিতে বিশ্বাসী। যারা নীতিতে বিশ্বাস করে সব দেশ তাদের পছন্দ করে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বান চাই। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সামনে নিয়ে যেতে চাই। আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র নষ্ট করতে চাই না, আমরা সন্ত্রাস চাই না। এটা আমাদের লক্ষ্য। এটা পশ্চিমাদেরও লক্ষ্য। সুতরাং আমরা তাদের সঙ্গে আছি। তারা (বিদেশিরা) দেখছে উল্টো দল (বিএনপি) তো মুখে এক কথা বলে, কাজে তারা সন্ত্রাসী। কেউ তাদের পছন্দ করে না।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা চাপ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, আমরা কখনও চাপ অনুভব করি না। আপনারা মিডিয়া আমাদের চাপ দিয়েছেন। আমাদের যে চাপ সেটা আমাদের নিজেদের চাপ। আমরা নিজেরা চাপ অনুভব করি, যাতে একটা গ্রহণযোগ্য এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। আমরা দুনিয়াকে দেখাতে চাই। অন্যদের তাগিদে না। অন্যরা আমাদের সাহায্যের জন্য এসেছে। আমেরিকা আমাদের সাহায্যের জন্য এসেছে।
আমেরিকার কী ধরনের সাহায্য করতে চায় তাও তুলে ধরেন ড. মোমেন। তিনি বলেন, আমেরিকা আমাদের সাহায্যের জন্য এসেছে। তাদের সাহায্যটা হলো, যারা নির্বাচন বর্জন করবে বা প্রতিহত করবে, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তাদের দেশে নেবে না। তাদের দেশে নেওয়া না নেওয়া তাদের বিষয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা যেটা বলেছিল, যারা নির্বাচন প্রতিহত করবে বা বর্জন করবে তাদের তারা ভিসানীতি প্রয়োগ করবে। আমি খুব খুশি হব, যদি তারা সত্যি সত্যি প্রয়োগ করে। তারা (বিএনপি) তো নির্বাচন বর্জন করছে। যাতে নির্বাচন না হয় তার জন্য প্রচার করছে। তবে আমেরিকা যে কমিটমেন্ট করে সেটা করলে ভালো।
বিএনপিকে উদ্দেশ্যে করে ড. মোমেন বলেন, নেতৃত্বের গাফিলতি এবং অপরিপক্কতার কারণে বিএনপি বিদেশিদের সমর্থন হারিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের উল্টো দল, তাদের ওপর বিদেশি অনেকের বিশ্বাস হারিয়ে গেছে। আগে মনে করেছিল তারা (বিএনপি) বোধহয় খুব শক্তিশালী। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের আন্দোলনের পর দেখল এটা গণতান্ত্রিক দল না। গণতান্ত্রিক দল সস্ত্রাসী তৎপরতা করে না।
বিএনপির সমালোচনা করে ড. মোমেন বলেন, এরা তো মনে হচ্ছে, অগণতান্ত্রিক, সন্ত্রাসী দল। সন্ত্রাসকে কেউ পছন্দ করে না। আমার মনে হয়, তাদের নেতৃত্বের গাফলতি এবং অপরিপক্কতার কারণে তারা অনেকের (বিদেশিদের) সমর্থন হারিয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে নির্বাচন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই হবে। না হওয়ার কী কারণ আছে? অবশ্যই হবে। যদি ভোটার ভোট দেয়, তাহলে এটা গ্রহণযোগ্য। যদি ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬-এর মতো নির্বাচন হয়, ১০-১৫ পারসেন্ট ভোট হয়; তাহলে গ্রহণযোগ্য না। ওটা দেশের মানুষ গ্রহণ করে নাই।
ভোটকেন্দ্রে ভোটার নিয়ে আসা বড় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমাদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো, আমরা চাই অধিক সংখ্যক লোক যেন কেন্দ্রে এসে ভোট দেয়। উল্টো দল (বিএনপি) আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। কোনো আতঙ্কের কারণ নাই। এবারের নির্বাচন কমিশন খুব শক্তিশালী। আমাদের পুলিশ বাহিনী অনেক উন্নত। আতঙ্কের কোনো কারণ নাই। সব ভোটকেন্দ্র নিরাপদ।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, আমরা এ এলাকায় ছায়াযুদ্ধ চাই না। এখন অঞ্চলের সব দেশ মোটামুটি আমাদের সঙ্গে একমত। আমরা ছায়াযুদ্ধ চাই না। ইউরোপীয়রা ছায়াযুদ্ধে পড়ে গেছে। আমরা আমাদের অঞ্চলে ছায়াযুদ্ধ চাই না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩
টিআর/এমজেএফ