ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১৫০ বছর পর ঐতিহাসিক গার্ডার ব্রিজের সংস্কার শুরু

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
১৫০ বছর পর ঐতিহাসিক গার্ডার ব্রিজের সংস্কার শুরু

পাবনা (ঈশ্বরদী): ব্রিটিশ আমলে ১৮৭৪ সালের দিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় ঈশ্বরদী-সান্তাহার রেলপথে নির্মিত করা হয়েছিল ২৬৩ নম্বর রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজ। ব্রিজটি নির্মাণ করার পর ট্রেন চলাচল করার মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় ৫০ বছর আগেই।

১৫০ বছর পর ৬ স্প্যান বিশিষ্ট ৫ পিলারের ওপরে ৭৮ ফুট দৈর্ঘ্যের গার্ডার ব্রিজটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ শুরু করেছে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ।

রেলওয়ের ওই গার্ডার ব্রিজটি ব্রিটিশ আমলের তৈরি হওয়ায় চুন-সুড়কির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে বেডব্লক ও পিলারে ফাটল ধরে ব্রিজ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। ট্রেন উঠলেই কেঁপে ওঠে পুরো ব্রিজটি।  

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় ঈশ্বরদী-সান্তাহার রেলরুটের রানীনগর-সান্তাহার রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী স্টেশন হেলালিয়াহাট নামক রেলস্টেশনের পাশে বেডব্লক ভেঙে সিসিক্রিপ দিয়ে অস্থায়ী রেললাইন তৈরি করা হয়। সিসিক্রিপের ওপর লোহার গার্ডার বসিয়ে শতাধিক রেলওয়ে শ্রমিক নিয়ে বিকল্প অস্থায়ী রেললাইনটি তৈরি করা হয়।  

এসময় ঢাকাগামী আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস পারাপার করা হয়। ব্রিজটি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত সকল ট্রেন অস্থায়ী ভিত্তিতে চলবে।  

গার্ডার ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ২৮টি যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেন সারাদেশে চলাচল করে। শুধু ১৪টি ট্রেন ঢাকা অভিমুখেই যায় এবং বাকি ১৪টি ট্রেন উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে আন্তঃনগর, মেইল ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে।

ব্রিজটি সংস্কার করা হলে গার্ডার রেলব্রিজ দিয়ে ঈশ্বরদী-সান্তাহার  রেলরুটে ১০০ কিলোমিটার গতিতে সকল আন্তঃনগর মেইল ও লোকাল ট্রেন নিরাপদে চলাচল করবে।  

এসময় উপস্থিত ছিলেন- পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) লিয়াকত শরীফ খান, বিভাগীয় সেতু প্রকৌশলী আব্দুর রহিম,বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী, রাজশাহী মোহাম্মদ আবু জাফর, সহকারী সেতু প্রকৌশলী (সেতু) জুয়েল মিয়া, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) সান্তাহার আব্দুর রহমান, (পথ) সিরাজগঞ্জ আহসানুর রহমান, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী পাকশী (সেতু) হাসান আলী

সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী, রাজশাহী মোহাম্মদ আবু জাফর বাংলানিউজকে জানান, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত গার্ডার ব্রিজটি ওই সময়ে ইটের মাঝে চুন-সুড়কি দিয়ে গাঁথুনি করা ছিল। দীর্ঘদিন যাবৎ কোনো সংস্কার না করায় চুন-সুড়কির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে ছাইয়ের মতো হয়ে গিয়েছিল। পিলারগুলোতে ফাটল ধরেছে। গুরুত্বপূর্ণ এ রেলরুটে দিয়ে ট্রেন চলাচলে যেন বিঘ্ন না ঘটে, অস্থায়ী রেললাইন তৈরি করে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী -২ বীরবল মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, ঈশ্বরদী-সান্তাহার রেল রুটের রানীনগর-সান্তাহার রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী স্টেশন হেলালিয়াহাট নামক রেলস্টেশনের পাশে ২৬৩ নম্বর ব্রিজটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়ায় বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল।  

বিভাগীয় প্রকৌশলী বীরবল মণ্ডল আরও জানান, ব্রিটিশ আমলে মজবুত ব্রিজটি নির্মাণে সিমেন্টের ব্যবহারের প্রচলন না থাকায় সব গাঁথুনি করা হয় চুন-সুড়কির সাহায্যে ফলে তখনকার গার্ডার ব্রিজগুলো এখন আর মজবুত না। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে আন্তঃনগর ট্রেনের গতি কমিয়ে চালানো হয়। তবে যেকোনো সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, তাই ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো ব্রিজগুলো সংস্কার করা হচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক বাংলানিউজকে জানান, শত বছর অতিক্রম করা পুরোনো রেলওয়ে ব্রিজগুলো পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন করেছি। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ যেগুলো সেগুলো চিহ্নিত করেছি। জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেন ব্রিজগুলো ভেঙে পড়ে রেল-যোগাযোগ বন্ধ না হয়ে যায়। বিষয়টি বিবেচনা করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ব্রিটিশ আমলের পুরাতন সব ব্রিজ সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজ করছে।  

প্রকৌশলী আসাদুল হক আরও জানান, পাকশী বিভাগের আওতায় ঈশ্বরদী-সান্তাহার রুটে ২৬৩ নং গার্ডার ব্রিজে অস্থায়ী ব্যবস্থাপনায় একটি রেললাইন নির্মিত করে হয়েছে। যেন সংস্কারকালে সকল ট্রেন চলাচল কোনো বিঘ্ন না ঘটে।

রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক আরও জানান, শত বছরের পুরোনো ব্রিজগুলোর ওপর দিয়ে ২৫ টন এক্সেল লোড নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। বর্তমান রেলবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে সকল ঝুঁকিপূর্ণ সকল  ব্রিজগুলো সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে 

উল্লেখ্য, ১৮৭৪ সালে ট্রেন চালু হওয়ার পর ভারতের জলপাইগুঁড়ি, দার্জিলিং, শিয়ালদহে ট্রেন চলাচল করতে। সে সময় দার্জিলিং মেইল নামে একটি ট্রেন এ রুটে চলাচল করত। ওই সময় ব্রিজটি নির্মাণ করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।