ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কোম্পানির ওষুধ না লেখায় নারী চিকিৎসকের ওপর আ.লীগ নেতার হামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪
কোম্পানির ওষুধ না লেখায় নারী চিকিৎসকের ওপর আ.লীগ নেতার হামলা

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের ডামুড্যায় নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ না লেখায় নুসরাত তারিন তন্বী নামে এক নারী চিকিৎসক ও তার পরিবার হামলার শিকার হয়েছেন।  

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে বাড়ি ফেরার পথে ওই চিকিৎসকের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে।

পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন, দক্ষিণ ডামুড্যা এলাকার দুলাল মাদবরের ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জুলহাস মাদবর এবং সদর উপজেলার বাইশ রশি এলাকার মোশারফ মৃধার ছেলে ও ওষুধ কোম্পানির মেডিক্যাল প্রোমোশন অফিসার শহিদুল ইসলাম মৃধা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন নারী চিকিৎসক নুসরাত তারিন তন্বীর সঙ্গে কিছুদিন পূর্বে একটি ওষুধ কোম্পানির শহিদুল ইসলাম মৃধার পছন্দের ওষুধ লেখা নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত ঘটে। বিষয়টি নিয়ে শহিদুল তার মামা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা জুলহাস মাদবরকে জানান। বুধবার রাতে ডামুড্যা বাজারের আলী আজম জেনারেল হাসপাতাল থেকে এক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া শেষে বাড়ি ফিরছিলেন নুসরাত। বাড়ির কাছাকাছি এলে তার ওপর হামলা চালান জুলহাস মাদবর তার ছেলে ডামুড্যা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি লিখন মাদবর, শহিদুল ইসলাম ও বেশ কয়েকজন।  

নুসরাতের চিৎকারে বাড়ি থেকে তার মা মাসুমা খাতুন ও স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জন মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া এগিয়ে গেলে তাদেরকেও মারধর করা হয়।  
পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে আহত অবস্থায় ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।  

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে নুসরাত তারিন তন্বীর স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ডামুড্যা থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

এব্যাপারে আহত নুসরাত তারিন তন্বী বলেন, শহিদুল ইসলাম বার বার তার কোম্পানির ওষুধ লিখতে আমাকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। আমি অস্বীকৃতি জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে রাতে স্থানীয় জুলহাস মাদবর, তার ছেলে লিখন মাদবরসহ বেশ কয়েকজন লোক নিয়ে আমার ওপর হামলা চালান। তারা ধাতব বস্তু দিয়ে আমার মুখে আঘাত করলে আমি জখম হই। পরে আমার চিৎকার শুনে আমার মা আর স্বামী আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা সরকারি চাকরি করতে গিয়ে গ্রামে সেবা দিতে এসেছি। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এমন বর্বরোচিত হামলা আমাদের সেবাদানে ব্যাঘাত ঘটাবে।

এ ব্যাপারে ডামুড্যা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এনামুল হক ইমরান বলেন, জুলহাস ভাইয়ের সঙ্গে চিকিৎসক ও তার মায়ের ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে পড়ে গিয়ে ওনি আহত হয়েছেন।

এ ব্যাপারে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ মোস্তফা খোকন বলেন, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি শহীদ ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক তন্বী ও তার পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তন্বীর মুখমণ্ডলে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, একটি কোম্পানির ওষুধ না লেখা নিয়ে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসক তার স্বামী ও মায়ের উপরে হামলার ঘটনার খবর পেয়েছি। পুলিশ আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে দ্রুত আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪
এসএএইচ 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।