ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বেতনের টাকা থেকে প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ীকে সহায়তা এসিল্যান্ডের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
বেতনের টাকা থেকে প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ীকে সহায়তা এসিল্যান্ডের

মেহেরপুর: অসহায় প্রতিবন্ধী পিন্টু মিয়া একজন পেয়ারা ব্যবসায়ী। তার ব্যবসার টাকা চুরি হওয়ায় যখন দিশেহারা, তখন নিজের বেতনের টাকা তুলে দিয়ে মানবিকতার এক বিশুদ্ধ উদাহরণ সৃষ্টি করলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম।

একই সঙ্গে চোরকে ধরতে সব ধরনের প্রচেষ্টা করারও আশ্বাস দেন তিনি।

পিন্টু মিয়া মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গোপালনগর গ্রামের রাস্তাপাড়া এলাকার তগাই মিয়ার ছেলে। ভিক্ষার ঝুলি নয়, জীবিকা নির্বাহে করেন ছোট্ট একটি ব্যবসা।  

জানা গেছে, গ্রাম থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভ্যানযোগে বিক্রি করতে যান মেহেরপুর জেলা শহরে। জেলা জজকোর্ট এলাকায় প্রতিদিন পেয়ারা বিক্রি করেই তার পাঁচ সদস্যের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।

গত শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) পিন্টু মিয়ার সারাদিনের পেয়ার বিক্রির পাঁচ হাজার টাকা কৌশলে চুরি করে নেয় চোরচক্র। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি। প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ী পিন্টু মিয়ার টাকা চুরির ঘটনায় অনেকে আফসোস করলেও কেউ এগিয়ে আসেননি তার সহযোগিতায়।  

পরে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অফিস শেষে ফেরার সময় অফিসের এক সহকারীর কাছ থেকে ঘটনাটি শুনে পিন্টু মিয়ার কাছে ছুটে যান সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম। পরে নিজের বেতনের টাকা প্রতিবন্ধী পিন্টু মিয়ার হাতে তুলে দেন তিনি।  

পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে চোরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনারও আশ্বাস দেন সরকারের এই কর্মকর্তা।

অসহায় প্রতিবন্ধী পিন্টু মিয়া জানান, স্বামী-স্ত্রী ও তিন ছেলে নিয়ে পাঁচজনের সংসার চলে এই ছোট্ট ব্যবসার ওপর। এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পেয়ারা কিনে নিজেই ভ্যান চালিয়ে শহরে বিক্রি করতে আসি। গত শুক্রবার সারাদিনের বিক্রি করা পাঁচ হাজার টাকা চুরি হয়ে যায়। ব্যবসার টাকা চুরি হওয়ায় আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। গত দুইদিন এলাকা থেকে পেয়ারা বাকিতে কিনে এনে বিক্রি করছিলাম। পেট তো থেমে থাকে না। আমার আয়ের ওপর পাঁচটি মুখ চেয়ে থাকে।  

এসিল্যান্ডের টাকা পেয়ে খুশি পিন্টু মিয়া। এই টাকা দিয়ে আবারও ভালো করে ব্যবসা করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমার অফিসের এক সহকারীর মুখ থেকে ঘটনা শুনে পিন্টু কাছে আসি। বিস্তারিত শুনে তার ব্যবসার জন্য বেতনের কিছু টাকা দিয়ে তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি মাত্র।  

তিনি আরও বলেন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা বলে চোর শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করবো।  

মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কনি মিয়া বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। চোরকে শনাক্ত করে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

উল্লেখ্য, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদানের পর সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে স্ব উদ্যোগে শহরে অবৈধ গাড়ি নিয়ন্ত্রণে ও রাস্তার পাশে অবৈধভাবে বালির স্তূপ রেখে জনভোগান্তি সৃষ্টির জন্য অভিযান শুরু করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই মেহেরপুর শহরের পরিষ্কার করবেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।