ঠাকুরগাঁও: ছয় বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন যাপন করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের মিলন হক। কথা ছিল পড়াশোনা করে চাকরি করে সংসারের হাল ধরার।
জীবনের ৩০টি বছর পার হয়েও জীবনের কোনো মানে খুঁজে পাননি তিনি। অপরিচিত জনের সঙ্গে আচরণ স্বাভাবিক হলেও নিজের পরিবারের লোকদের সঙ্গে করেন অস্বাভাবিক আচরণ। অনেক সময় নানাভাবে বিড়ম্বনায় ফেলে স্থানীয়দের। পরিবারে উপার্জনক্ষম মানুষ না থাকায় হচ্ছে না উন্নত চিকিৎসা।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের পূর্ব কুজি শহরে মফিজ উদ্দীন ও শাহেদা বেগম দম্পত্তির সন্তান মিলন হক। নয় বছর বয়সে গলায় টিউমার ধরা পড়ে মিলনের। চিকিৎসা নেওয়ার পরে কিছুদিন সুস্থ হলেও আবার শুরু হয় অসুস্থতা। ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে এ অসুস্থতা। এখন শিকলে বেধে না রাখলে নানাভাবে মানুষকে হেনস্তায় ফেলে। একদিকে স্বামীর অসুস্থতা অন্যদিকে ছেলের শিকলবন্দি জীবন যাপন নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করেন বৃদ্ধা শাহেদা বেগম। নিজের অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় তাকে।
স্বামী ব্রেন স্টোক করে প্যারালাইজড আর ছেলেকে বেঁধে রাখতে হয় শেকলে। স্বামী সন্তানের মুখের খাবার জোগাড় করবেন না চিকিৎসা করাবেন এই দোটানায় চলছে শাহেদা বেগম। মানুষের বাসায় কাজ করে সকার দু-মুঠো খাবারের ব্যবস্থাই করতে পারছেন তিনি। স্বামী সন্তানের চিকিৎসা করানোর মতো ক্ষমতা নেই তার। এখন বাধ্য হয়ে সন্তানের চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা।
প্রতিবেশী আনারুল ইসলাম বলেন, তাদের পরিবারটা চলতে পারছে না। তার বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করে পড়ে আছে। ছেলেটাও শিকলে বন্দি। আমরা মাঝেমধ্যে টুকটাক সহযোগিতা করি। কিন্তু মিলনের প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসার। তা না হলে পরিবারটার জন্য সামনে আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
মিলনের মা শাহেদা বেগম বলেন, ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই আমাদের। মিলনের বাপ অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছে। সুস্থ থাকলে তিনি কাজ করতে পারতেন। আমি একদিন কাজে গেলে আবার অসুস্থ হয়ে যাই। এখন মিলনের চিকিৎসা না হলে আমাদের পরিবারটা কীভাবে চলবে। যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের পাশে কেউ না দাঁড়ালে আমাদের আর অস্তিত্ব থাকবে না।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত হলাম। এমন হলে খুবই দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪
এসএম