ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গাংনীর ১০৪ যুবককে উদ্ধার করল মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪
গাংনীর ১০৪ যুবককে উদ্ধার করল মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশ

মেহেরপুর: আদম পাচারকারী দালালদের গোপন ক্যাম্প থেকে ১০৪ যুবককে উদ্ধার করেছে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশ। মালয়েশিয়ার সালাক সালাতন নামের একটি ক্যাম্প থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।

 

উদ্ধার হওয়া যুবকদের পরিবারের লোকজন ও মালয়েশিয়ার সালাক সালাতন ক্যাম্পে বন্দি গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রহমান, আব্দুল মজিদের ছেলে আব্দুস সালাম মোবাইল ফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে সাহেবনগর গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন, ব্রজপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম, কল্যাণপুর গ্রামের ওবায়দুল্লাহ, আব্দুল মজিদ, রফিকুল ইসলাম, আসাদুল ইসলাম ও আতিয়ার রহমান বাদী হয়ে গাংনী থানায় এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।  

মুছা ইন্টারন্যাশনাল নামের আদম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক সাহেবনগর গ্রামের মৃত ইছাহাক আলীর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মুসা কলিমকে প্রধান আসামি ও একই গ্রামের আব্দুল হাদি ওরফে সুরুজের ছেলে আব্দুল আওয়াল, আব্দুল হাদি, রঞ্জিত মণ্ডলের ছেলে আমিরুল ইসলাম, নুর ইসলামের ছেলে হাসানুজ্জামান, নুর মোহাম্মদের ছেলে আরিফুল ইসলামকে মামলার আসামি করা হয়েছে।

২০১২ সালের মানবপাচার আইনের  ৬(২)/ ৭/৯/১০ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। গাংনী থানার মামলার নম্বর ৩২ তাং ২৮/০২/২৪ ইং।

গাংনী থানার তদন্ত কর্মকর্তা মনোজিত কুমার নন্দী মামলার বিষয়টি তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের সদস্য টাকার বিনিময়ে লোক পাঠিয়ে প্রতারণা ও জোর করে শ্রমে বাধ্য করার অপরাধে মামলাটি এফআইআরভুক্ত করা হয়েছে।

মামলার এক বাদী সাহেবনগর গ্রামের আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, আমার ছেলে আব্দুস সালামকে ভালো কাজ দেবে বলে মুসা কলিম ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন। প্রায় ৪ মাস আগে তিনি মালয়েশিয়াতে নিয়ে একটি ক্যাম্পে আটকে রেখেছেন। ছেলে আমাকে গত সোমবার বিকেলে (বাংলাদেশ সময়) মোবাইল ফোনে জানান, তাদের সালাক সালাতন ক্যাম্পে পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে। অর্ধশত যুবকদের উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর কথা হবে না। চিন্তা করবেন না।  

সাহেবনগর গ্রামের সাগরিকা খাতুন বলেন, সংসারের সুখের জন্য ভিটে মাটি বিক্রি ও ধার দেনা করে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম আদম ব্যাপারীর দালাল সাহেবনগর গ্রামের সুরুজ আলীর হাতে। আমার ছেলে শাহীন আলমকে মালয়েশিয়া নিয়ে একটি ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে ৪ মাস আটকে রেখেছে। সোমবার সেখানকার ইমিগ্রেশন পুলিশ আমার ছেলেসহ প্রায় শতাধিক যুবককে উদ্ধার করেছে। এখন আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।  

তিনি বলেন, হাড়াভাঙ্গা, সাহেবনগর, সহড়াতলা, কাজিপুর এলাকার প্রায় তিন শতাধিক যুবকের পরিবারে শুধু হতাশা আর কান্না।  

এদিকে আদম পাচারকারী সাহেবনগর গ্রামের প্রধান আদম ব্যবসায়ী মুছা ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইঞ্জিনিয়ার মুসা কলিম, সুরুজ আলী, রাজু আহমেদ, তোফাজ্জেল মাস্টারসহ তাদের লোকজন বাড়িঘর ছেলে পলাতক রয়েছেন।

মালয়েশিয়ায় আটকে থাকা ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানান, স্থানীয় গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের কেএনএসএইচ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান শিক্ষক মাজেদ মাস্টার, কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে ন্যাড়া, বালিয়াঘাট গ্রামের আনিসুল হক মাস্টারের ছেলে শোভন, সাহেবনগর গ্রামের সুরুজ ও তার ভাই আওয়াল এবং ইঞ্জিনিয়ার মুসা কলিমের মাধ্যমে ঢাকায় নাভিরা ও মুসাকলি এন্টারপ্রাইজ এজেন্সির মাধ্যমে টাকা দিয়ে ভালো কাজের আশ্বাসে তারা মালয়েশিয়ায় আসেন।

ক্যাম্পে আটকে থাকা যুবকেরা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ৪/৫ মাস আগে এখানে এসেছি। আমাদেরও এই ক্যাম্পে আটক রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে আজকে শতাধিক যুবককে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে মালেশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।