ঢাকা, শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: বেতন তুলে বাড়ি ফেরা হলো না সাগরের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৪
বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: বেতন তুলে বাড়ি ফেরা হলো না সাগরের

পাবনা: দিনমজুর বাবার অভাবী সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিয়েছিলেন সাগর হোসেন (২০)। এই মাসের ১০ তারিখে বেতন তুলে বাড়িতে আসার কথা ছিল তার।

কিন্তু এর আগেই আগুন কেড়ে নিল তার ও পরিবারের স্বপ্ন।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে তার নামটিও।

নিহত সাগর পাবনার ফরিদপুর উপজেলার হাদল ইউনিয়নের ধানুয়াঘাটা পূর্বপাড়া গ্রামের হাসান আলী ও সাবিনা খাতুন দম্পতির ছেলে। এ বছর এইচএসসি পাশ করেছেন সাগর। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাগর ছিলেন সবার বড়। তার বাবা দিনমজুর এবং মা গৃহিণী। অভাবী সংসারের হাল ধরতে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজে যোগদান করেন তিনি।

ধানুয়াঘাটা গ্রামের বাসিন্দা ঢাকায় কর্মরত মনিরুল ইসলাম মনির জানান, গারদা শিলড সিকিউরিটি কোম্পানির মাধ্যমে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ক্লথিং ব্যান্ড ইপিলিয়ন শো রুমে জয়েন করেছিল। সেই অফিস ছিল ওই ভবনে। সেখানে কর্মরত অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডের সময় আটকা পড়ে মারা যান সাগর।

শুক্রবার (০১ মার্চ) বিকেলে তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর ভিড়। শোকে পাথর হয়ে গেছেন বাবা-মা। মাঝে মাঝে ছেলের জন্য আর্তনাদ করছেন তারা। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশীরা। শোকে ভারী হয়ে উঠেছে গ্রামের বাতাস।

সাগরের বাবা হাসান আলী বলেন, দিনমজুরি করে কোনো রকমে সংসার চালাই। ছেলেকে লেখাপড়া করানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। বাবা-ছেলে আলোচনা করে কাজের সন্ধানে তাকে ঢাকায় যেতে বলি। চার মাস আগে সে ঢাকায় গিয়ে সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি শুরু করে। সে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা পাঠাতো। তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলছিল। গত রাত একটার দিকে জালসা শুনে বাড়ি ফেরার পর আমি শুনতে পাই আমার ছেলে নাই। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো।  

সাগরের মা সাবিনা খাতুন বলেন, দুদিন আগে ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে। বেতন তুলে ১০ তারিখে বাড়ি আসবে বলেছিল সাগর। আমি বলেছিলাম টাকার দরকার নেই, তুমি বাড়ি চলে আসো। কিন্তু তার আগেই আমার ছেলেটা পৃথিবী থেকে চলে গেল বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সাগরের মা।  

হাদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন বলেন, সাগর আমাকে দাদা বলে ডাকতো। ঢাকা থেকে এসে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল সে। ঢাকা যাওয়ার আগেও আমার সাঙ্গে কথা বলেছে সে। শুক্রবার সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে জানলাম বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় সাগর মারা গেছে। এটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তার পরিবারটি খুবই অসহায়। আমি এবং উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো। সেইসঙ্গে দাবি জানাই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যেন পরিবারটি ক্ষতিপূরণ পায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।