ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ৫৮ জন দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঢামেক হাসপাতালে সোমবার (৪ মার্চ) এ অভিযান চালিয়ে তাদের এই সাজা দেওয়া হয়।
হাসপাতালের অনেকে বলছেন, ঢামেক হাসপাতালে র্যাবের অভিযানে আটক হওয়া দালালদের দেখে মনে হচ্ছে বিশাল মিছিল। অথচ হাসপাতালের প্রবেশের প্রতিটি গেটে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছেন আনসার সদস্যরা। দালাল প্রতিরোধ ও ভিজিটর নিয়ন্ত্রণ প্রধান দুটি কাজই করেন তারা। এত নিরাপত্তার মধ্যেও র্যাবের অভিযানে দেখা গেলো ঢামেক হাসপাতাল যেন আটক দালালদের মিছিলে পরিণত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) হাসপাতালে কিছু চিকিৎসক ও প্রশাসনিক ব্লকের প্রশাসন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বাংলানিউজকে বলেন, র্যাবের অভিযানে প্রমাণিত হয়েছে ঢামেক হাসপাতালে আটক দালালদের মিছিলে পরিণত হয়েছে। ৫৮ জন দালালকে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে আনুমানিক ৫০ জন দালালকেই আটক করা হয়েছে হাসপাতালে ভবনের ভেতর থেকে। তাহলে আর বোঝা বাকি নেই, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় কেউ না কেউ হাসপাতাল থেকেই দিচ্ছেন। এদিকে র্যাব বলেছে, তারা মাসব্যাপী হাসপাতালে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রমাণস্বরূপ দালালদের আটক করেছে।
সূত্রটি আরও জানান, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) হাসপাতালের একটি বিশেষায়িত বিভাগ। রাত হলে সেখানে দালালদের সংখ্যা বাড়ে। তখন দেখলে মনে হবে দালালদের মিছিল। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে কখনো সরাসরি আইসিইউ পাওয়া যায় না। রোগীতে সব সময় পরিপূর্ণ থাকে। এই সুযোগটাই নিয়ে থাকে দালালরা। এদের আড্ডা চলে রাতে।
সূত্রের কাছে আইসিইউর দালালদের নাম জানতে চাইলে, তিনি বলেন, রাতে জরুরি বিভাগের তারা সব সময় থাকে। আপনারাই খুঁজে বের করুন তাদের নাম কি? তারা কারা?
ঢামেক হাসপাতালে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা আনসার সদস্যদের প্রধান প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) উজ্জ্বল বলেন, হাসপাতালে ভবনের প্রবেশের প্রতিটি দুয়ারে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন আনসার সদস্যরা। এর মধ্যেও হাসপাতালে দালালরা বিভিন্নভাবে প্রবেশ করছেন। আমরাও প্রায় সময় দালাল ও চোর ধরে কর্তৃপক্ষকে অবগত করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে থাকি। আমাদের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি আছে কি না বিষয়গুলো ভালোভাবে নজরদারি করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, হাসপাতালের প্রতিটি প্রবেশদ্বারে আনসার সদস্য নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও এত দালাল কীভাবে প্রবেশ করে, তা হাসপাতালের তরফ থেকেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঢামেক হাসপাতাল থেকে অভিযান চালিয়ে প্রমাণস্বরূপ ৫৮ জন দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের প্রতিটি প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তায় আনসার সদস্যরা থাকা পরও এত দালাল কীভাবে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করলো, এছাড়া দালালদের প্রশ্রয়ে হাসপাতালের কারো হাত আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, সে বিষয় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
হাসপাতাল থেকে দালালদের আটকের পরে সোমবার বিকেল ৩টায় বাগানগেটে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এখান থেকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়া, সিট পাইয়ে দিয়ে মোটা অংকের অর্থ দাবি করা এবং বিভিন্ন ব্লাডব্যাংকে মাদকসেবীদের ধরে ব্লাড নিয়ে বিক্রির তথ্য পেয়েছি। আমরা এখানে একমাস ধরে তাদের গতিবিধি এবং ভিডিওসহ তথ্য সংগ্রহ করেছি। আটকদের তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। ৫৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। আমরা আজকে স্বল্পসংখ্যক দালালকে ধরতে পেরেছি। এ অভিযান চলবে। এখান থেকে যেসব হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নেওয়া হয়, সে হাসপাতালগুলোতেও অভিযান চালানো হবে।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, ঢামেকে দালাল চক্রের বিশাল বড় সিন্ডিকেট রয়েছে। এর হোতাসহ যারা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত তাদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
আটকের পর তাদের সাজা দিলে কারাগার থেকে বের হয়ে ফের একই কাজই করে তারা। এ চক্রকে এত সহজে নির্মূল করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২৪
এজেডএস/এএটি