ফরিদপুর: ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় ইউরিয়া সার মিশ্রিত মুড়ি উৎপাদন ও বাজারজাত করণের উদ্দেশে সংরক্ষণ করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয় তিন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশে নওপাড়া বাজার মুড়ির মিলে উপস্থিত হলে তাদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। পরে তাদের মোবাইলফোনও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাতীয় দৈনিক কালবেলার ফরিদপুর প্রতিবেদক তন্ময় উদ্দৌলা, স্থানীয় দৈনিক নাগরিক বার্তার স্টাফ রিপোর্টার এনামুল খন্দকার ও দৈনিক মুক্ত খবরের স্টাফ রিপোর্টার আরিফুজ্জামান চাকলাদার (আপেল) ইউরিয়া সার মিশ্রিত মুড়ি উৎপাদনের দৃশ্য ধারণকালে প্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের ওপর চড়াও হন। এ সময় তারা নিজেদের পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং মিলে কর্মরত কর্মচারীদের নিয়ে তাদের মোবাইলফোন, ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এক পর্যায়ে মিল মালিক তাদের মিল থেকে বের করে পাশের অফিসে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবরুদ্ধ করে রাখেন।
সংবাদকর্মীরা বিষয়টি মোবাইলফোনে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) এবং মধুখালী থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশের উপস্থিতির বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদের ছেড়ে দেন। পরবর্তী সময়ে সংবাদকর্মীরা মধুখালী থানায় উপস্থিত হয়ে তাদের লাঞ্ছিতের বিবরণ তুলে ধরে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অনতিবিলম্বে ভেজাল মুড়ি উৎপাদকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
অভিযোগ রয়েছে, বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় রমজান মাসে বাজারে মুড়ির চাহিদা থাকে অনেক বেশি। সেই চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীরা এ সময়ে নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ সাদা ধবধবে মুড়ি উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকেন। তেমনিভাবে উপজেলার নওপাড়া বাজারে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে এসে মো. ঈশারত মোল্যা নামের এক ব্যক্তি ‘মায়ের দোয়া মুড়ি ও চিড়া অটো মিল’ নামে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন।
এদিকে, সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত ও অবরুদ্ধ করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. ইশারত মোল্যা।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওই তিন সাংবাদিক কোনো অনুমতি ছাড়াই আমার মুড়ির ফ্যাক্টরির ভেতরে ঢুকে পড়েন। একই সঙ্গে কারও অনুমতি ছাড়াই ছবিও তুলতে থাকেন। সে সময় আমার প্রতিষ্ঠানের মুড়ি তৈরির কারিগরেরা চিল্লাচিল্লি করতে থাকেন। পরে, আমি ওই তিন সাংবাদিককে আমার সঙ্গে কথা বলতে বলি। তাদের সঙ্গে এসময় একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে, তবে কোনো লাঞ্ছিতর ঘটনা ঘটেনি। ’
এ ব্যাপারে মধুখালী থানার ওসি মো. মিরাজ হোসেন বলেন, ওই তিন সাংবাদিক মধুখালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মধুখালী ইউএনও মামনুন আহমেদ অনীক বাংলানিউজকে বলেন, আমি খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মধুখালী থানার ওসিকে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠাতে বলি। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই তিন সাংবাদিককে উদ্ধার করে।
ইউএনও বলেন, ওই তিন সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন তাদের ওপর হামলা, লাঞ্ছিত ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তবে এটি ফৌজদারি অপরাধের আওতায় পড়ে। যেহেতু এটি ফৌজদারি কার্যবিধির আওতায় পড়ে তাই এ ব্যাপারে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ওই ফ্যাক্টরিতে ইউরিয়া মিশ্রিত মুড়ি তৈরির যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ওই প্রতিষ্ঠানটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৪
এসআরএস