পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আমিনুল ইসলাম। চোখে না দেখলেও প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর আন্দাজ করে পরিচালনা করছেন নিজের তৈরি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
সমাজ ও পরিবারের বোঝা না হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার রত্নীবাড়ি বাজারে মোবাইল ও ইলেক্ট্রিক সামগ্রীর ব্যবসা করছেন তিনি।
সরেজমিনে চাকলাহাট ইউনিয়নের রত্নীবাড়ি বাজারে গিয়ে ‘মা মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার’ নামে আমিনুলের দোকানে দেখা মিলে এমন চিত্র।
বর্তমান সমাজে যেখানে সুস্থ মানুষেরা ভিক্ষাবৃত্তিতে ঝুঁকছে সেখানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও কাজ করে পরিবার চালাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম, বলছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো সকালে দোকান খুলতে সাহায্য নেন মানুষের। এরপর শুধু আন্দাজ করে ক্রেতাদের কাছে মোবাইল, ইলেকট্রিকসামগ্রীসহ অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করেন। চোখে না দেখলেও পণ্য হাতে নিয়েই বর্ণনা দিতে পারেন তিনি। টাকা স্পর্শ করেই বুঝতে পারে টাকার পরিমাণ। স্বল্প লাভে বিশ্বাস করে ক্রেতারাও তার দোকান থেকেই বিভিন্ন সামগ্রী কিনে নেন। ছোট করে ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে তার দোকানে প্রায় লাখ টাকার মালামাল রয়েছে। ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি আজান দিলে আদায় করছেন ৫ ওয়াক্ত নামাজ।
স্থানীয় আমিরুল ও খয়রুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হালালভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন আমিনুল। প্রতিবন্ধী হয়েও কাজ করে এলাকা সকলের কাছে আদর্শ হয়েছেন তিনি। আমরা তার দোকানের ক্রেতা হতে পেরে ধন্য।
বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ছোট থেকে শুরু করে এখন বড় দোকান প্রতিষ্ঠা করেছেন আমিনুল। তার ইচ্ছা শক্তির কারণে এটা সম্ভব। তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি আমরা। ব্যবসা পরিচালনায় যে কোনো সমস্যায় তার খোঁজখবর রাখছি আমরা।
এদিকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আমিনুল ইসলাম মুন্সি বাংলানিউজকে বলেন, দোকানে মোবাইলফোন মেরামত করার জন্য একটা ভাতিজাকে রেখেছি। এছাড়া নিজের পাশাপাশি পরিবারের চাহিদা মেটাতে ইলেকট্রিকের দোকান করেছি। তবে ১৫ বছরের মাথায় বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ঊর্ধ্বগতি হওয়ার কারণে পরিবার নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছি। কিছুটা সহায়তা পেলে অনেক উপকারে আসবে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের অফিসার লায়লা আরজুমান বাংলানিউজকে বলছেন, আমিনুলের এমন উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে সহায়তার আবেদন করলে পাশে দাঁড়ানো হবে।
মাত্র ১০ বছর বয়সে বিদ্যালয়ে খেলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন আমিনুল। চোখে বালু পড়লে দেখতে শুরু করেন ঘোলা। এর মাঝে ব্যয়বহুল হওয়ায় দারিদ্র পরিবার করাতে পারেনি চিকিৎসা। বর্তমানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাঝে বিয়ে করে দুই সন্তানের বাবা হয়েছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আমিনুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৪
এসএএইচ