ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদযাত্রা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২৬ পয়েন্টে যানজটের শঙ্কা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৪
ঈদযাত্রা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২৬ পয়েন্টে যানজটের শঙ্কা

কুমিল্লা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে প্রতিবছর ঈদে ঘরমুখো মানুষকে যানজটের কবলে পড়তে হয়। সড়কে যানবাহনের চাপ, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা ও গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

তবে এবারের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মহাসড়কের কুমিল্লার অংশ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যানজটের কারণ এবং যানজটপ্রবণ ২৬টি পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ।

সূত্র জানায়, এই মহাসড়কে যুক্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ ১০ জেলা। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে কয়েক লাখ মানুষ ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরবে। এই ঈদযাত্রায় যেন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি না হয় এবং নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সেকারণেই এসব উদ্যোগ পুলিশের।

মহাসড়কের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিত:

ঈদ ঘিরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু এলাকায় আগে যানজট সৃষ্টি হতো। বর্তমানে যানজট কমেছে। তারপরও সব বিষয় বিবেচনা করে এই মহাসড়কের অধিক গুরুত্বপূর্ণ ১২টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থান হলো- বলদাখাল বাসস্ট্যান্ড, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, নিমসার বাজার ও ইউটার্ন, ক্যান্টনমেন্ট মোড় (উভমুখী), আলেখারচর বিশ্বরোড, বিসিক মোড় চৌদ্দগ্রাম, লালপোল, ভাটিয়ারী পয়েন্ট, ফৌজদারহাট ইউটার্ন, সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ড, বড় দারোগারহাট স্কেল। এসব স্থানে অতিরিক্ত টহল ও বাড়তি নজরদারিতে রাখবে হাইওয়ে পুলিশ।  

এছাড়া তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি স্থান হিসেবে শহীদনগর বাসস্ট্যান্ড আমিরাবাদ বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, কোটবাড়ি ইউটার্ন, জাগুরঝুলি কাটা, নূরজাহান হোটেলের সামনের ইউটার্ন, সদর দক্ষিণ থানার সামনের ইউটার্ন, সুয়াগাজী বাজার (উভমুখী), নাজিরা বাজার ইউটার্ন, বাড়বকুন্ড বাজার, ছোট কুমিরা, কেডিএস মোড়, ফুটলিং এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে।

যে কারণে যানজটের আশঙ্কা:

হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের যানজটের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে মহাসড়কের পাশে অবৈধ হাটবাজার ও স্থাপনা নির্মাণ, মহাসড়কে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা, অবৈধ পার্কিং, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা, উল্টোপথে গাড়ি চালনা, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, পণ্যবাহী গাড়িতে ওভার লোডের কারণে ধীরগতি, পথচারীদের অসচেতনতা, টোলপ্লাজায় ধীর গতিতে টোল আদায়, দুর্ঘটনার কারণে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া, ত্রুটিপূর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে বিকল হয়ে যাওয়া, সড়ক পরিবহন আইন অমান্য করে গাড়ি চালনা, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত গাড়ি চালনার ফলে যানজট লেগে থাকে।

হাইওয়ে পুলিশের উদ্যোগ:

মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত যান চলাচল স্বাভাবিক করতে অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে বিশেষ কুইক রেসপন্স টিম। সড়কজুড়ে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে কমিউনিটি পুলিশ। কুমিল্লা রিজিয়নে হাইওয়ে সেক্টর থাকবে দুটি ও সাব সেক্টর ২১টি, মোবাইল ডিউটি থাকবে ৩৪টি, পিকেট ডিউটি ১৫টি, কুইক রেসপন্স টিম মোটরসাইকেলযোগে থাকবে ১৫টি, পিকআপযোগে ১৫টি, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ একটি, রেকার ডিউটি সরকারি পাঁচটি ও বেসরকারি ছয়টিসহ সর্বমোট ১১টি, অ্যাম্বুলেন্স ডিউটি দুটি, কন্ট্রোলরুম একটি, অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম বা ওয়াচ টাওয়ার থাকবে ৩৫টি। এভাবে সব পদের সর্বমোট ৬৮০ জন পুলিশ ও ৩৫০ জন কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য সার্বক্ষণিক মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মহড়া দেবে। একইসঙ্গে জেলা পুলিশ মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী থানা এলাকায় যেখানে সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য সড়ক ও জনপথের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা কাজ করছেন। যানজটমুক্ত, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অতিরিক্ত ব্যবস্থার পাশাপাশি মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা ব্যবস্থা।

সড়ক ও জনপথের উদ্যোগ:

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, আমরা হাইওয়ে পুলিশ ও পরিবহন নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বলেছি কোথাও এখন উন্নয়ন বা সংস্কার কাজ হবে না। চান্দিনা ও গৌরীপুরে আমাদের নিজস্ব সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। সেগুলোর মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে। কোথাও সড়কে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে তা সমাধানে আমাদের দুটি টিম প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও আমরা আমাদের স্বেচ্ছাসেবীদের মাঠে রেখেছি। তারা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।

পরিবহন মালিকদের উদ্যোগ:

কুমিল্লা জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, হাইওয়ে পুলিশ ও সড়ক বিভাগ আমাদের সঙ্গে বসেছে। তারা আমাদের বলেছে যেন ঈদ মৌসুমে কোনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি না বের করি, গাড়ি স্ট্যান্ড ছাড়া যেন না দাঁড়ায়, যত্রতত্র যাত্রী না ওঠানামা করাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা বলেছি সড়কে চাঁদাবাজি না হলে এবং পুলিশ সহযোগিতা করলে বাস শ্রমিকেরাও অনিয়ম করবে না। অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।

কমিউনিটি পুলিশিং কুমিল্লা রিজিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাজী শারমিন আউয়াল পারভেজ বাপ্পি বলেন, যে সব স্থান যানজটপ্রবণ সেসব স্থানে আমাদের বিশেষ নজর থাকবে। যদি মালিক, শ্রমিক, হাইওয়ে পুলিশ ও যাত্রীরা সমন্বয় করে এবারের ঈদ যাত্রা পূর্বের তুলনায় আরও বেশি সুন্দর ও নিরাপদ হবে।

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, মহাসড়কে কোথাও হাইওয়ে পুলিশ চাঁদাবাজি করলে তা প্রমাণিত হলে তাকে ক্লোজ করা হবে। কোনোপ্রকার যানবাহন দাঁড় করে হয়রানি যাবে না। মহাসড়ক এলাকায় বাজার ও বাসস্ট্যান্ড রয়েছে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিষিদ্ধ তিনচাকার গাড়ি আটক হলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কুমিল্লা অংশে দাউকান্দিসহ একাধিক স্থানে সিসি ক্যামারার মাধ্যমে সড়কের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোত কিছুটা যানজট রয়েছে। তবে এবার  ঈদে নির্বিঘ্নে সকলে বাড়ি ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারবে মানুষ। কোনো দুর্ঘটনাজনিত কারণে কিংবা টোলপ্লাজায় যদি যানবাহনের জটলা তৈরি হয়, সেজন্য হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নানান ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর টোলপ্লাজায় সাধারণ গাড়ির চাপ বাড়লেই যানজট তৈরি হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।