ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মসজিদ নির্মাণ করল হিজড়া সম্প্রদায়, নামাজ পড়েন সবাই

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
মসজিদ নির্মাণ করল হিজড়া সম্প্রদায়, নামাজ পড়েন সবাই

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে নির্মিত হয়েছে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য প্রথম মসজিদ। জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ৩৩ শতক জমি বরাদ্দ নিয়ে নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বড়ইকান্দী গ্রামে বানানো এ মসজিদের নাম ‘তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর ও দক্ষিণ চর কালিবাড়ি আশ্রয়ণ মসজিদ’।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চলতি রমজান মাস শুরুর এক সপ্তাহ আগে এ মসজিদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু হয়েছে। এতে হিজড়াদের সঙ্গে নিয়মিত নামাজ পড়ছেন এলাকার সাধারণ মানুষও।

এলাকাবাসী বাংলানিউজকে জানান, মসজিদ নির্মাণ করায় হিজড়া জনগোষ্ঠীদের নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, এক কক্ষ বিশিষ্ট মসজিদটির দেয়াল ও চাল টিনের। সামনে ছোট্ট বারান্দা। পাশেই বসানো হয়েছে সাবমারসিবল পাম্প, ওজুখানা ও বাথরুম।

স্থানীয় হিজড়া ও এলাকাবাসী জানান, বড়ইকান্দী গ্রামের পাশেই একটি মসজিদে নামাজ পড়তে যেত ওই এলাকায় বসবাসকারী  কয়েকজন হিজড়া। তখন মুসল্লীদের কেউ কেউ হিজড়াদের নিয়ে কটু কথা বলতেন। এতে বিব্রতবোধ করে হিজড়ারা তাদের নেতা তনু হিজড়াকে ঘটনাটি জানায়। পরে নিজেদের মধ‍্যে আলোচনা করে তারা এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।  

মসজিদের সভাপতি স্থানীয় বড়ইকান্দী গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল মোতালেব বাংলানিউজকে জানান, হিজড়াদের সঙ্গে আমরাও একমত হয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করেছি। এতে স্থানীয় বাসিন্দারাও নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।  

এ সময় কথা হয় মসজিদ নির্মাণের উদ্যোক্তাদের একজন স্থানীয় হিজড়া মো. এনামুল হক রাসেল ওরফে রাশি হিজড়ার সঙ্গে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই এলাকায় আমরা ৪০ জন হিজড়া বসবাস করি। আমরাও নামাজ কালাম করতে চাই। কিন্তু পাশের এক মসজিদে আমাদের কয়েকজন নামাজ পড়তে গেলে অনেকেই হাসাহাসি ও কটূক্তি করেন। এজন্য আমরা বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে ৩৩ শতক জমি বরাদ্দ নিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি। পাশাপাশি একটি মাদরাসা, তিনতলা মসজিদ কমপ্লেক্সসহ কবরস্থান ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত এসব প্রতিষ্ঠান বাস্তবে রূপ নেবে। সেই সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার আমাদের মসজিদের জন্য দুই লাখ টাকা দিয়েছেন। সে টাকা দিয়েই আমরা এই মসজিদের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছি।  

রাশি আরও বলেন, সব সময় সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হিজড়া জনগোষ্ঠী। ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানেও তাদের সুযোগ কম। তাই সরকারের দান করা জমিতে আমরা মসজিদ বানিয়েছি।  

মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে মুক্তা হিজড়া বাংলানিউজকে বলেন, ছোটবেলায় মাদরাসায় পড়েছি। এখন নিজেদের মসজিদে নামাজ পড়ি, কোরআন তেলাওয়াত করি। আমাদের সঙ্গে এলাকাবাসীও নামাজ আদায় করেন। আমরা খুব খুশি। এখন থেকে কেউ আর হিজড়াদের এই মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে কটূক্তি করতে পারবে না।  

জুঁই হিজড়া বলেন, আমরাও মুসলিম। সবাইকে মরতে হবে। আল্লাহর ভয় করে আমরাও নামাজ পড়ি। আমাদেরও কবরে সওয়াল জবাব হবে।  

এই মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. আ. মোতালে বলেন, গত ২০ ধরে আমি এই মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ইমামতি করি। এতে হিজড়াসহ এলাকাবাসীও নামাজ পড়ছেন। ভালোই লাগে, মনে শান্তি পাই।  

স্থানীয় মুদি দোকানি মো. আজিজুল হক বলেন, নদের তীরে এলাকাবাসীর একটি মসজিদ ছিল। সেটি কিছুদিন ধরে ভেঙে পড়েছিল। এরপর স্থানীয় হিজড়ারা একটি মসজিদ করতে চাইলে আমরাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে এই মসজিদ করেছি। এখন সবাই একত্রে নামাজ পড়ি। ভালোই লাগে। আশা করছি এর মাধ‍্যমে হিজড়ারাও আল্লাহর পথে অনুপ্রাণিত হবে।  

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজীয়া বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় হিজড়া জনগোষ্ঠীর কিছু সদস্য আমার কাছে এসে মসজিদ ও কবরস্থানের জন্য জমি চাইলে তাদের ৩৩ শতক জমি সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরপর সম্প্রতি তারা মসজিদের ঘর নির্মাণের জন্য আমার কাছে সহযোগিতা চায়। পরে আমি তাদের জন্য একজন বিত্তবান মানুষের কাছ থেকে দুই লাখ টাকার ব‍্যবস্থা করে দিয়েছি। শুনেছি তারা এখন মসজিদ নির্মাণ করে নামাজ পড়ছেন। স্থানীয়রাও তৃতীয় লিঙ্গের এই জনগোষ্ঠীদের ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে নিয়েছে, এটা ভালো কাজ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।