ঢাকা, রবিবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিনতাই মামলার ২ আসামি

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিনতাই মামলার ২ আসামি বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন হাওলাদার আকাশ

ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঙলা কলেজের ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে ছিনতাই মামলার দুই আসামি পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুজনই কমিটির বড় দুই পদে নির্বাচিত বলে জানা গেছে।

ছিনতাই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন হাওলাদার আকাশ। সংগঠনের এক নেতা আবার জানিয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া রুবেল বাঙলা কলেজেরই ছাত্র নন। তিনি প্রাইভেট ডিগ্রির ছাত্র।

গত বুধবার (২৭ মার্চ) রাতে ছাত্রলীগের প্যাডে সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সইয়ে নতুন এ কমিটি ঘোষণা হয়।

ছিনতাই মামলাটি নতুন নয়। ঘটনাটি ঘটে ২০১৯ সালে। সে বছর ২৩ মার্চ মো. কামরুজ্জামান ওরফে পাখি নামে এক যুবক বাদি হয়ে দারুস সালাম থানায় মামলাটি করেন। এতে বাংলা কলেজ ছাত্রলীগের এ দুই নেতাসহ তিনজনের নাম উল্লেখ ও ৪/৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করেন। মামলার এজাহারে অপর আসামির নাম মো. মেহেদী লেখা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ২০১৯ সালের ২২ মার্চ রাত ৯ টার দিকে দারুস সালাম থানার টোলারবাগ ২ নম্বর গেটের সামনের রাস্তার ওপর আমাকে একা পেয়ে আসামিরা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। আমার কাছে থাকা ১৭ হাজার ৩০০ টাকা ও ম্যানিব্যাগ, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আসামিরা ছিনিয়ে নেয়। আমার ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আসামিরা আমাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। আমি আহত হয়ে সাক্ষীসহ স্থানীয় লোকজনদের সহযোগিতায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিই।

ঘটনার ব্যাপারে ভুক্তভোগী মো. কামরুজ্জামান ওরফে পাখির সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওই ঘটনায় আমি থানায় মামলা করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি দারুস সালাম থানা। মামলার পরে থানা থেকে আমার সাথে যোগাযোগও করেনি কেউ।

মামলার আসামির এখন কোথায় জানেন কিছু... প্রশ্ন করলে পাখি বলেন, শুনেছি কয়েকদিন আগে বাংলা কলেজের ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছে। সেই কমিটিতে আমার মামলার দুই আসামি রুবেল হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ও আকাশ হয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক। সরকারি দলের নেতা হওয়ায় আসামিদের গ্রেপ্তার করেনি বলেও তিনি দাবি করেন।

মামলার বিষয়ে দারুস সালাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম সাথে বাংলানিউজের প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন। সে সময় দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, থানার ওসি অসুস্থ। তিনি কথা বলতে পারছেন না। ডাক্তার তাকে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।

পরে দারুস সালাম থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলানিউজ। তিনিও ওসির অসুস্থতার দাবি করেন। মামলার বিষয়ে ‘কি কথা’ তার উনার সঙ্গে বলতে বলেন। মামলা সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৯ সালের ২৩ মার্চের ছিনতাই মামলার তদন্ত শেষে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। এখন আর আমাদের কাছে কিছু নেই। কোর্টে খোঁজ নেন।

এদিকে, মামলা সম্পর্কে জানতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে আরেক তথ্য। বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটির এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, রুবেল এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র নন। তিনি প্রাইভেট ডিগ্রির ছাত্র দাবি করে কাগজপত্র হাজির করেছেন। ২০১৬ সালের পর থেকে কলেজে কোনো ডিগ্রি নেই। আর প্রাইভেট ডিগ্রি এবং প্রাইভেট বা প্রিলিমিনারি মাস্টার্সের স্টুডেন্টকে বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে গণ্য করা হয় না। এটা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ধরনের সান্ধ্যকালীন কোর্সের মতো। কলেজের বিপুলসংখ্যক ত্যাগী, পরিশ্রমী ও নিয়মিত শিক্ষার্থী থাকার পরও অ-ছাত্রদের নেতা বানানোর কোনো মানে হয় না।

পুরো বিষয় নিয়ে ‘নিজের নামে ছিনতাই মামলা ছিল না’ বলে দাবি করেন রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, আপনাকে (সাংবাদিক) আপনাকে কেউ ভুল তথ্য দিয়েছে। আপনি যাচাইবাছাই করেন। আমি এই মামলার জড়িত না। দীর্ঘদিন বাঙলা কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় একেকজন একেকভাবে অভিযোগ তুলছেন।

বাঙলা কলেজের ছাত্র কি না, প্রশ্ন করলে কলেজ ছাত্রলীগের নব গঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি ডিগ্রি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।

ছিনতাই মামলায় আরেক অভিযুক্ত ও বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন হাওলাদার আকাশের সঙ্গে কথা বলতে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মিঠুন কলেজের মৃ‌ত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও কে একাধিকবার কল করা হয়। বার্তাও পাঠানো হয় তাকে। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

পরে সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবগত নই। মামলা যদি থেকে তাকে, সেটি হয়রানীমূলক কিনা সেটা জানতে হবে। অনেক ব্যাপারেই অভিযোগ হয়ে থাকে। অভিযোগ হলেই তো সেটি প্রমাণিত হয়ে যায় না। মামলা হয়ে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
এমএমআই/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।