সাভার (ঢাকা): ঈদ যাত্রার তৃতীয়দিনে কোনো ভোগান্তি ছাড়াই কর্মস্থল ছাড়ছেন শিল্পাঞ্চলের মানুষ। ঘরমুখো মানুষের সংখ্যাও ছিল কম।
শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর, বাইপাইল, শ্রীপুর ও জিরানীবাজার বাস স্ট্যান্ড ঘুরে ঈদ যাত্রার দ্বিতীয় দিনের মতো তৃতীয় দিনেও শেকড়ের টানে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ দেখা যায়নি। তাতেও বাড়ানো হয়েছে বাসের ভাড়া। জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ কিংবা এর চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে দাবি যাত্রীদের।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩৭২ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত, বগুড়ার ভাড়া ৫৫৮ টাকা, নাটোর ৫৯৩ টাকা, পাবনা ৬৪৬ টাকা, নওগাঁ ৭০১ টাকা, রাজশাহী ৭১২ টাকা, জয়পুরহাট ৭১২ টাকা, রংপুর ৮৭৯ টাকা, দিনাজপুর ৯৪০ টাকা, লালমনিরহাট ৯৯৪ টাকা, কুড়িগ্রাম ১০০২ টাকা, নীলফামারী ১০১৬ টাকা, ঠাকুরগাঁও ১০৯৫ টাকা ও পঞ্চগড় ১২৩৫ টাকা। তবে এ ভাড়ার চেয়ে প্রতিটি গন্তব্যস্থলে যেতে হলে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষকে।
নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের কয়েকটি কাউন্টার ঘুরে নাটোরের দুটি টিকেট নিশ্চিত করেছেন রিকশাচালক হারুন মন্ডল। তিনি গ্রামের উদ্দেশে পোশাক শ্রমিক স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে ঈদ যাত্রা করবেন। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ৫৯৩ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও তাকে প্রতিটি টিকিট ক্রয় করতে হয়েছে ৯৫০ টাকা দরে।
হারুন মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, আমি নাটোরে যাবো। আগে কাউন্টারে টিকিট ক্রয় করে চেয়ারকোচে বাড়ি যেতাম। আজ এসে দেখি ওইসব কাউন্টারে টিকিট নেই। পরে লোকাল গাড়ির ৯৫০ টাকা করে ১ হাজার ৯০০ টাকা দিয়ে দুটি টিকেট কিনেছি।
তিনি বলেন, সময় যত গড়াবে তত ভাড়া, যানজট ও ভোগান্তি বাড়বে। তাই কিছু টাকা বেশি গেলে কিছু করার নেই।
মনিরুল ইসলাম রনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি ছোট খাটো ব্যবসা করি। আমাকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এই এলাকাতেই থাকতে হবে। তাই ভোগান্তিহীন ঈদ যাত্রার আশায় পরিবারের সদস্যদের একটু আগেভাগেই গ্রামে পাঠিয়ে দিলাম। ভাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বগুড়ার ভাড়া ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। কিন্তু ঈদ যাত্রা উপলক্ষে তা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হয়েছে। আর যাত্রীরাও বাধ্য। কারণ সব যানবাহনের টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কাউন্টারে গেলেই কাউন্টার মাস্টার বলেন, টিকিট অনলাইনেই শেষ হয়ে গেছে। অগ্রিম টিকিট আরও আগেই কিনে রেখেছে যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই পরিবারকে গ্রামে পাঠালাম।
এ ব্যাপারে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকার আজিজ পাম্প সংলগ্ন শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। আমরা শুধু যাত্রীদের তুলে দেওয়ার জন্য কাউন্টার খুলে রেখেছি। যাত্রীরা আসছেন আমরা গাড়িতে তুলে দিচ্ছি। এখান থেকে দুই একটি টিকিট বিক্রি করছি। যাত্রীর চাপ নেই, টিকিট বিক্রি করবো কার কাছে।
লোকাল গাড়ির কাউন্টার মাস্টার মো. পরান বলেন, আমরা ঈদের আগে বিভিন্ন গাড়ি কন্ট্রাক্ট করে থাকি। এ সময় বেশি ভাড়া থাকে। আমরাই তো বেশি টাকা দিয়ে মালিকের কাছ থেকে কন্ট্রাক্ট করে নেই। বাসের মালিকের টাকা, তেল খরচ, রাস্তা খরচ ও স্টাফ খরচ বাদ দিয়ে আমাদের তিন জনের খরচ তুলতে হয়। এক্ষেত্রে ১০০-২০০ টাকা বেশি নিতেই হয় ভাই। ঈদে রাস্তা খরচ বেশি, আর আমরা যেসব গাড়ি পাই সেগুলোর বেশির ভাগই ভিন্ন রুটের। ঈদ উপলক্ষে তাদের কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়। আর এসব নানা কারণে গাড়ির খরচ একটু বেশি। আমরা যাত্রীদের সেবার জন্য এসেছি। এতো কষ্ট করছি দুই একশো টাকা লাভ না করলে আমরা, পরিবার নিয়ে ঈদ করবো কিভাবে!
সাভার হাইওয়ে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ। অতিরিক্ত ভাড়া অদায়ের ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি শাহাবুদ্দিন বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। আমরা তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছি। এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৪
জেএইচ