ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দিনমজুরদের ঈদযাত্রায় ট্রাকই ভরসা

অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৪
দিনমজুরদের ঈদযাত্রায় ট্রাকই ভরসা

ঢাকা: ঈদ যাত্রার চতুর্থ দিনের রাত ১২টা। শেকড়ের টানে গ্রামে যেতে ব্যাগ কাঁধে করে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল বাস স্ট্যান্ডে ট্রাকের অপেক্ষা করছেন দিনমজুর মোহাম্মদ সবুজ মিয়া।

ট্রাকে গ্রামে গেলে ভাড়া বাঁচবে প্রায় অর্ধেক। তাই ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই বাড়ি ফিরবেন তিনি।

রোববার (৭ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল বাস স্ট্যান্ড গিয়ে দেখা যায় সবুজ মিয়া ও তার মতো আরও অনেকের বাড়ি ফেরার দৃশ্য। সবুজের সঙ্গে ছিল তার বাবা-মা-ছোট বোন। ট্রাকে চড়ে সিরাজগঞ্জ যেতে তাদের ভাড়া দিতে হয়েছে দেড় হাজার। বাসে নিজ গন্তব্যে যেতে হলে তাদের গুণতে হতো অন্তত সাতে তিন হাজার টাকা।

একই ট্রাকে সবুজের সঙ্গে ছিল আরও অন্তত ১২ জন। তারাও অর্ধেক ভাড়া নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। কথা হলে সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা পোশাক শ্রমিক ও আমি দিনমজুরের কাজ করি। মা ও ছোট বোন বাসায় থাকেন। পাঁচ জনের সংসারে আমাদের যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। প্রায় তিন মাস ধরে আমরা ঈদ উদযাপনের জন্য টাকা জমিয়েছি। তা যদি বাসের ভাড়া দিতেই যায় তাহলে ঈদ করবো কি দিয়ে, এজন্য আমরা ট্রাকে উঠেছি। আমাদের মতো দিন মজুরের ট্রাকই ভরসা।

সবুজ আরও বলেন, আমরা প্রথমে বাসে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছি। সব বাসের লোকজন ৩৫০ টাকার ভাড়া ১ হাজার চাচ্ছেন। কোনোভাবেই ৫০০ টাকা দিয়েও বাস চালককে রাজি করাতে পারলাম না। তাই বাধ্য হয়ে ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছি। আমাদের যা বাজেট ছিল তাই দিয়েই ট্রাকে তরে সিরাজগঞ্জ যেতে পারবো।

ট্রাকে চড়ে দূর গন্তব্যে যেতে ঝুঁকি অনেক। এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেই সবুজ বলেন, আমরা তো জানি এভাবে যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ৩৫০ টাকার ভাড়া ১ হাজার টাকা কীভাবে দেই। আর আমাদের ইনকামও খুব বেশি না। ইনকাম ভালো হলে ঝুঁকি ছাড়া আরামে সিটে বসেই বাড়ি যেতে পারতাম। আমাদেরও তো মন চায় বাসের সিটে বসে বাড়ি যেতে। কিন্তু ইনকাম কম হওয়ায় তা আর হয়ে ওঠে না।

সবুজের সঙ্গে যারা ট্রাকে চড়েছেন তাদের সবার কথাও একই। ট্রাকে চড়া অপর ১২ জনের বেশিরভাগই দিন মজুর। আবার কেউ কেউ গার্মেন্টস কর্মী। দুয়েকজন আছেন প্রান্তিক কর্মী, অর্থাৎ অন্যের জমিতে বর্গা খাটেন। তাদের আয় রোজগারও কম। যে কারণে, ঝুঁকি থাকলেও ট্রাকে চড়ে বাড়ি ফিরছেন তারা।

রোববার রাতে ট্রাকে চড়ে বাড়ি ফেরাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাইপাইল এলাকায় কর্তব্যরত হাইওয়ে পুলিশের সদস্যদের নির্বিকার ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। কেননা, তাদের সামনেই নির্দেশ অমান্য করে বেশ কয়েকটি ট্রাক পরিবহনের জন্য যাত্রী তুলছিল। কিছু কিছু পরিবহন সড়কের আইন ভঙ্গ করছিল। কিন্তু আইন রক্ষাকারীরা ছিল নীরব।

এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা হতে তিনি বলেন, আমার আত্মীয়ের ট্রাক। সেটাতেই লোক উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঈদ যাত্রায় মানুষ যেভাবে পারে বাড়ি যাচ্ছে। আমাদের করার তেমন কিছুই নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষেরা ঝুঁকি নিয়েই যে যার মতো বাড়ি ফিরছেন। আমরা আসলে যানজটের বিষয়টি দেখছি। নিম্ন আয়ের মানুষ ট্রাকে ট্রাকে বাড়ি যাচ্ছেন। আমরা কতটি ট্রাক থামাবো?

ট্রাকে যাত্রী পরিবহনের ব্যাপারে সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (ওসি) আইয়ুব আলীর সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। পুরো বিষয়টি শুনে তিনি সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার কথা বলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।