ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে কৃষককে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
ফরিদপুরে কৃষককে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি

ফরিদপুর: ‘বাড়ি থেকে ওষুধ কিনতে বের হন কৃষক ইউসুফ ব্যাপারী (৪৫)। ওষুধ কিনে অটোরিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলেন।

পথিমধ্যে অটোরিকশা থেকে নামতেই দাড়ি-টুপি পরা একজন ব্যক্তি মসজিদের জন্য কিছু সাহায্য চান। তাকে সাহায্যের উদ্দেশ্যে পকেট থেকে ২০ টাকা বের করে তার হাতে দিতেই অচেতন হয়ে পড়েন কৃষক ইউসুফ। এরপর তাকে চোখ-মুখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় বরিশালে।

সেখান একটি আবাসিক হোটেলের অন্ধকার কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখে চেহারা পরিবর্তন করতে মুখের দাড়ি ও মাথার চুল কেটে ফেলা হয়। মুক্তিপণের দাবিতে করা হয় নির্যাতন। দেওয়া হয়নি কোনো খাবার। পরিবারের কাছে চাওয়া হয় ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ। পরিবার ভয়ে কয়েক দফায় ৫০ হাজার টাকাও দেন তাদের। ’

কথাগুলো বলছিলেন অপহরণের পর মুক্তি পাওয়া ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঠাকুরডাঙ্গী এলাকার কৃষক ইউসুফ ব্যাপারী।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ভয়ে আঁতকে উঠছিলেন এ কৃষক। এর আগে বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে বরিশাল থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।  

অপহরণের শিকার হওয়া কৃষক ইউসুফ ব্যাপারী বলেন, মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে গ্রামের বাড়ি ঠাকুরডাঙ্গী থেকে পাশের আটরশির একটি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে যাই। এরপরই আমাকে বিশেষ কায়দায় অপহরণ করে। পরে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে রাখা হয় বরিশালের পোর্ট এলাকার ‘স্বাগতম’ নামক একটি আবাসিক হোটেলের ৩০২ নম্বর কক্ষে। যেখানে আমি তালাবদ্ধ ছিলাম। রুমটি ছিল অন্ধকার।

তিনি আরও বলেন, এরপর আমার ব্যবহৃত ফোন বন্ধ করে রাখা হয়। আমাকে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। চেহারা পরিবর্তন করতে নির্যাতন করে মুখের দাড়ি-মাথার চুল কেটে দেয় তারা। পরে ওইদিন রাত দুইটার দিকে আমার মেবাইল ফোন খুলে বাড়িতে ফোন কল দিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাইতে বলেন। আমি বাড়িতে আমার স্ত্রীকে জানালে তারা ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেনও। সেই সঙ্গে আমাকে অভয় দেন যে তারা তাকে উদ্ধারে কাজ করছেন।

অপহরণের শিকার ইউসুফ ব্যাপারীর স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, আমাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেটা সৌদি আরব থাকেন। আমার স্বামী দুপুরে ওষুধ কিনতে বের হওয়ার পর বিকেল পর্যন্ত বাড়িতে ফিরে না আসায় তাকে ফোন কল করলে তা বন্ধ পাই। এরপর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সব আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও না পাওয়াই কান্নাকাটি করি। পরে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতেই সদরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। পরে ডিবি ও সদরপুর থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে আমার স্বামীকে উদ্ধার করে। এতো দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন ভাবতেও পারিনি। পুলিশকে এ সময় কৃতজ্ঞতা জানান এ নারী।

ইউসুফ ব্যাপারীর মেয়ে জামাই সোয়েব হাসান বলেন, আমরা পুলিশের সঙ্গে ওই আবাসিক হোটেলে গিয়ে আমার শ্বশুরকে তালাবদ্ধ অবস্থায় একটি রুমে দেখতে পাই। তিনি আমাদের দেখার পর চিনতেই পারছিলেন না। পরিচয় দেওয়ার পর ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে বারবার কেঁদে উঠছিলেন তিনি।

জেলা গোয়েন্দা ডিবি পুলিশ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ভাঙ্গা জোন) মোহাম্মদ সফর আলী বলেন, ফরিদপুরের এসপি মোর্শেদ স্যারের নির্দেশে ডিবি ও সদরপুর থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করি। এ ঘটনায় সদরপুর থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ইউসুফ ব্যাপারী ওষুধ কিনতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন। পরে ডিবি ও সদরপুর থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে বরিশালের স্বাগতম নামক একটি আবাসিক হোটেলের ৩০২ নম্বর কক্ষ থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সদরপুর থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।