ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তীব্র গরমে শ্রমজীবী মানুষের হাঁসফাঁস

ইফফাত শরীফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৪
তীব্র গরমে শ্রমজীবী মানুষের হাঁসফাঁস

ঢাকা: মেরাদিয়া হাট থেকে যাত্রী নিয়ে দুপুর আড়াইটায় রামপুরা ব্রিজে পৌঁছান রিকশাচালক হযরত আলী। প্রচণ্ড গরমে শরীর দিয়ে ঘাম ঝরে তার গোসল করার মতো অবস্থা।

যাত্রী নামিয়েই রিকশাটাকে একপাশে রেখে ক্লান্ত শরীরে গিয়ে দাঁড়ান ডাব বিক্রেতার কাছে। দাম কত জানতে চাইলে বিক্রেতা উত্তর দেন ১৫০ টাকা। ডাবের এমন দাম শুনে হতাশ হয়ে পাশের শরবত বিক্রেতার কাছ থেকে দশ টাকায় এক গ্লাস শরবত কিনে খান।

হযরত আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দেড় মাস আগে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় এসেছেন রিকশা চালাতে। প্রতি ঈদেই কিছুটা বাড়তি আয় রোজগার করার আশায় ঢাকায় আসেন। তীব্র গরম, রোদ-বৃষ্টি যাই থাকুক না কেন, পরিবারের ভরণপোষণের জন্য টাকা আয় করতে ক্লান্ত শরীরকে বিশ্রাম দেবার ফুরসত নেই তার।

রিকশাচালক হযরত আলী বলেন, তীব্র গরমে অসুস্থ (সর্দি ও পেট খারাপ) হয়ে দুই দিন রিকশা চালাতে পারিনি। আজ বের হয়েছি রিকশা নিয়ে। ঢাকায় থাকি না  বলে কোনো রিকশা গ্যারেজ আমাকে অটোরিকশা (ব্যাটারি চালিত রিকশা) ভাড়ায় দেয় না। অটোরিকশা থাকলে গরমে কষ্টটা একটু কম হয়। বাধ্য হয়ে এই গরমেও প্যাডেল রিকশা চালাতে হচ্ছে। সারা দিন তীব্র গরমের মধ্যে রিকশা চালিয়ে পানি আর শরবত খেতেই অনেক টাকা চলে যায়। এত গরম জীবনেও দেখি নাই।

দিন দশেক ধরে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে শনিবার (২০ এপ্রিল) দেশে সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্য দিনগুলোতেও ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় অনুভূত হচ্ছে ভ্যাপসা গরম।

তীব্র গরমের কারণে হাঁসফাঁস করছে মানুষজন। প্রচণ্ড তাপে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সারা দেশে বয়ে চলা তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। তীব্র গরমে তাদের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই শ্রমজীবী মানুষ।

সেগুনবাগিচা এলাকার রিকশাচালক জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এই গরমে রিকশা চালানো যায় না। রোদের তীব্রতায় মাথা ঘুরে যায়। তবুও বাধ্য হয়ে কাজ করছি। কারণ, পরিবার চালাতে হবে।

দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার নির্মাণশ্রমিক আনোয়ার হোসেন প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করছেন। কাজের ফাঁকে পাশের এক চায়ের দোকান থেকে স্যালাইন ও পানি কিনেছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, উপরে কড়া রোদ, নিচে গরম পাথর, মাঝখানে আমরা। এই গরমে কাজ করা খুব কষ্টকর। পরিবারের দিকে তাকিয়ে দিনমজুরদের কাজ করতে হয়। এই গরম আর সহ্য হয় না। বৃষ্টি কবে পড়বে সেই আশায় আছি!

শুধু আনোয়ার হোসেনই নয়, বৃষ্টির প্রতীক্ষায় রয়েছে দেশের প্রতিটি মানুষ। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীতে সামান্য বৃষ্টি হয়েছিল। এরপর থেকে গরম আরও বাড়তে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৪
ইএসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।