ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা, ঘাতক স্বামী গ্রেপ্তার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৪
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা, ঘাতক স্বামী গ্রেপ্তার

যশোর: চাঁদপুরে যৌতুক না দেওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ঘাতক স্বামী ইব্রাহিম প্রধানিয়াকে বেনাপোল পৌর এলাকা থেকে আটক করেছে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (০৯ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বেনাপোল পৌরশহরের ডিগ্রি কলেজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আটক ইব্রাহিম প্রধানিয়া চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার বকচর এলাকার আব্দুল মোতালেবের ছেলে। স্ত্রীকে হত্যার পর গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি বেনাপোল এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন।

র‌্যাব-৬ (যশোর) ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন বলেন, গত ১০ এপ্রিল চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ এলাকায় স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে (২৩) নির্যাতন করে শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন স্বামী ইব্রাহীম। চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিহত গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে মতলব দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত গৃহবধূর শাশুড়িকে মামলা দায়েরের পরপরই গ্রেপ্তার করা হলেও মূল অপরাধী ঘাতক স্বামী নিজেকে আত্মগোপন করেন। ঘটনাটি স্পর্শকাতর ও হৃদয়বিদারক হওয়ায় সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মূল অপরাধী ঘাতক স্বামীকে গ্রেপ্তারের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের সহযোগিতা চান।  

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার প্রধান পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারে র‌্যাব-৬ যশোর ক্যাম্প গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। এরপর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত দেড়টার দিকে বেনাপোল ডিগ্রি কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি ঘাতক স্বামী ইব্রাহিম প্রধানিয়াকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

মামলার বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন,  নিহত গৃহবধূ খাদিজা আক্তারের সঙ্গে ইব্রাহিম প্রধানিয়ার পারিবারিকভাবে গত চার বছর পূর্বে বিয়ে হয় এবং তাদের দুটি ছেলে সন্তান আছে। গত এক বছর যাবৎ স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে ফার্নিচার নিয়ে আসার জন্য তার স্বামী ও শাশুড়ি বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতেন এবং মাঝেমধ্যে শারীরিক নির্যাতন করতেন। কিন্তু গৃহবধূর বাবা হতদরিদ্র হওয়ায় ভুক্তভোগীর শ্বশুরবাড়িতে তাদের দাবিকৃত ফার্নিচার দিতে পারেননি। এতে গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতন করলে স্থানীয় মেম্বার ও মুরব্বিদের নিয়ে একাধিকবার সালিশ-বৈঠক করা হয়। সালিশে স্বামী ও শাশুড়ি গৃহবধূর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার অঙ্গীকার করলেও পরবর্তীতে তারা আবারও বিভিন্ন অজুহাতে গৃহবধূকে ফের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। গত ঈদুল ফিতরের রাতে বাড়িতে কোনো ধরনের বাজার না করার বিষয়কে কেন্দ্র করে গৃহবধূকে তার স্বামী ও শাশুড়ি মিলে নির্যাতন করেন এবং একপর্যায়ে বাড়িতে থাকা ডিজেল ওই গৃহবধূর শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় গৃহবধূর ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে আগুন নেভায়। কিন্তু ততক্ষণে তার প্রায় সম্পূর্ণ শরীর পুড়ে যায়। পরবর্তীতে অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলে চিকিৎসারত অবস্থায় ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে গৃহবধূ মারা যান।

র‌্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন জানান, গ্রেপ্তার আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন এবং গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য যশোরের বেনাপোল ডিগ্রি কলেজ এলাকায় বসবাসরত তার আত্মীয়ের বাড়িতে নিজেকে আত্মগোপনে রেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন।  

গ্রেপ্তার আসামিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান এ র‌্যাব কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৪
ইউজি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।