খুলনা: ‘রিমালের আঘাতের পাঁচ দিন পরও পানির নিচে আমাদের ঘর-বাড়ি। জোয়ার-ভাটায় আমরা ডুবি-ভাসি।
বলছিলেন খুলনার কয়রা উপজেলার দশালিয়ার বাসিন্দা জহির মোড়ল। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সম্প্রতি উপকূলের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি তছনছ হয়ে গেছে দশালিয়াও। শুক্রবার (৩১ মে) বিকেলে সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে বাংলানিউজের কাছে আক্ষেপ প্রকাশ করেন জহির মোড়লসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
দশালিয়ার কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা আইনুদ্দিন এলাকার দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘দশালিয়া মৌজায় ৭০০ বিঘা সম্পত্তির সবই চিংড়ি ঘের। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের সময় জলোচ্ছ্বাসে সব ঘের ডুবে গেছে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে এখানকার বাড়িঘর। তারা এখন খুব বিপদের মধ্যে রয়েছে। হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল মারা গেছে। আস্তে আস্তে মানুষ এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সরকার যদি এসব গরিব মানুষের দিকে একটু নজর দেয়, তাহলে তাড়াতাড়ি এসব এলাকার মানুষ কষ্টের হাত থেকে বাঁচতে পারবে। ’
এলাকাবাসী জানান, প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ২৬ মে ভোররাতে কপোতাক্ষের লবণাক্ত পানি দশালিয়ার প্রায় আধা কিলোমিটার জরাজীর্ণ বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে। তখনই স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে স্থানীয় এলাকাবাসী বাঁধের ওপর বস্তা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করেন। তবে ২৭ মে দুপুরের জোয়ারে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। দশালিয়ার দুইটি স্থানের ৭০ মিটার বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়। পরে স্থানীয় জনগণ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ২৮ মে সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চলে। তবে পানি আটকানো সম্ভব হয়নি।
২৯ মে ভোর ৬টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মানুষ কাজ করে দশালিয়ায় ভেঙে যাওয়া দুটি স্থানে রিং বাঁধ দিতে সক্ষম হয়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগের অভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি তারা। নদীর জোয়ারের পানি বাঁধ ছাপিয়ে যাওয়ায় গ্রামের একাংশে ৫৬ পরিবার এখনো পানিবন্দী। তাদের সুপেয় পানি ও খাবারের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অসুস্থদের চিকিৎসা সেবা মিলছে না। তারা জোয়ারের সময় খাটের ওপর অথবা বাঁধের ওপর বসে থাকছেন।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের ভয়াবহ তাণ্ডবে কয়রার নড়বড়ে বেড়িবাঁধ অনেক স্থানে ভেঙে গেছে। বিশেষ করে কয়রা উপজেলার দশালিয়ার দুইটি স্থানের ৭০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে লবণাক্ত পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাঁধটি কয়েক দফায় স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে মেরামতের চেষ্টা করে এলাকাবাসী। কিন্তু প্রবল জোয়ারের পানির চাপ ও বাতাসের কারণে তারা বারবারই ব্যর্থ হয়েছেন। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলের বাসিন্দারা প্রতিনিয়তই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে টিকে থাকি। প্রতিনিয়তই অব্যাহতভাবে ভাঙছে আমাদের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। এই বাঁধগুলো হচ্ছে এ অঞ্চলের জানমালের রক্ষাকবচ, অথচ বাঁধগুলো কখনোই টেকসইভাবে সংস্কার করা হয় না। সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আমরা থাকি। আমরা কোনো ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। টেকসই বেড়িবাঁধ স্থাপিত হলে যত ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাস হোক না কেনো আমরা অন্তত নিরাপদে বাঁচার নিশ্চয়তা পাবো। ’
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তারিক উজ জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ভাঙনকবলিত দশালিয়ার বাঁধ নির্মাণের জন্য আজ (শুক্রবার) বালু নেওয়া হয়েছে। ছুটির দিন থাকার কারণে পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যায়নি। আশা করছি আগামীকাল শনিবার (১ জুন) বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৪
এমআরএম/এইচএ