ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রিমালের ভয়াবহতা কাটিয়ে দুরন্তপনায় উপকূলের শিশুরা

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৬ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৪
রিমালের ভয়াবহতা কাটিয়ে দুরন্তপনায় উপকূলের শিশুরা

পাথরঘাটার উপকূল ঘুরে: পূর্ব আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে, শান্ত বিষখালী ছড়াচ্ছে তার অপরূপ সৌন্দর্য। সূর্যোদয়ের আভার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিষখালী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠছে উপকূলের শিশুরা।

 

অথচ এই শান্ত বিষখালীই কয়েকদিন আগে অশান্ত রূপ নিয়ে সব কিছু লন্ডভন্ড করে দেয়। আবার সেই অশান্তি আবার শান্তর রূপে ফিরে এসেছে। কিন্তু বিষখালী নদী শান্ত রূপে এলেও বিষখালীর অজান্তেই রয়েছে রিমালের ভয়াবহতা। উপকূলের শিশুরা বুঝে না এই বিষখালীর পানিই এখন তাদের জন্য কতটা ঝুঁকি।

পূর্বে বিষখালী ও পশ্চিমে বলেশ্বর নদ, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর মধ্যবর্তী পাথরঘাটা উপজেলা। বিষখালী নদী সংলগ্ন উত্তর চরলাঠিমারা গ্রামের দুরন্তপনা শিশুরা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে গোসল করছে আর আনন্দ করছে। কিন্তু এই পানিই যে বেড়িবাঁধের ভেতরের পুকুর-ঘেরের পচে যাওয়া পানি স্লুইজ হয়ে নদীতে পানি নামছে তা বুঝে না এখানের দুরন্তপনা শিশুরা। এ পানিতে চর্মরোগসহ পানিবাহিত নানা রোগেও আক্রান্ত হতে পারে তাও জানে না তারা।

এদিকে ভয়ংকর রিমাল আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে উপকূলের কোমলমতি শিশুদের মনে। সম্প্রতি উপকূলে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল পাথরঘাটায় সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে।  

রোববার (২৬ মে) ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আঘাত হানে, সোমবার (২৭ মে) নদীতে দেখা দেয় জলোচ্ছ্বাস। এতে বিশেষ করে উপকূলের কোমলমতি শিশুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।  

শনিবার (১ জুন) সকালে বিষখালী নদী সংলগ্ন পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের উত্তর চরলাঠিমারা (পাঁচ চুঙ্গা) এলাকায় একাধিক শিশুকে দেখা গেছে নদীর পানিতে ডুবাডুবি করছে। পাশাপাশি বাড়ির পুকুর-ডোবা নালায়ও খেলা করছে। ওই পানিতে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ, কালো হয়ে গেছে। এছাড়াও মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় পরিবারে সবার অগোচরে শিশুরা খেলায় মেতে উঠেছে।

কথা হয় মুছা (৬), হাসান (৮) বাবু (১২) শিশুর সঙ্গে। সকালে উঠেই তারা খেলায় মেতে উঠে। তারা বলে, ডুবাডুবি করতে ভালো লাগে তাই করি। ভয় হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওরা বলে- মোগো ডর ভয় নাই। এ রহম সব সময়ই ডুবাই।  

পচা পানিতে শরীরে সমস্যা হবে জানো কিনা এমন প্রশ্ন করলে শিশুরা বলে, পচা পানি তো দেহি। সমস্যা হয় কিনা জানি না। অপর শিশু আবু বকর বলে, ‘বইন্যার রাইতে ঘরেই আছিলাম। দেখছি বাতাস আর পানি। অনেক ভয় পাইছি’।  

ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ৮৪ লাখের বেশি মানুষ স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৩২ লাখ শিশু।  

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, উপকূলের শিশুরা খুবই ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া শিশুরা যেহেতু নদীর পাড় এবং পানির কাছাকাছি থাকতে অভ্যস্ত এ কারণে ঝুঁকি আরও বেশি। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের শিশুদের প্রতি বেশি খেয়াল রাখতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।