ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাসেলের খামারে কোরবানি ঈদের জন্য প্রস্তুত ২৫ গরু

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৪
রাসেলের খামারে কোরবানি ঈদের জন্য প্রস্তুত ২৫ গরু

লালমনিরহাট: ঘাস, খড় ও ভুসি খাইয়ে কোরবানির জন্য ২৫ গরু প্রস্তুত করেছেন খামারি রাসেল মাহমুদ। একেকটি গরুর দাম প্রায় দুই লাখ টাকার ওপরে।

 

রাসেল মাহমুদ জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের হাজীগঞ্জ ধনীটারী এলাকার জেন্দাল হকের ছেলে। তিনি পেশায় ব্যাংকার হলেও ‘সাফা অ্যাগ্রো’ নামে তার একটি গরুর খামার রয়েছে। সেখানে খামারে তার গরু রয়েছে ৭০টি।  

জানা গেছে, ছোট বেলা থেকে গরু-ছাগল পালা শখ ছিল রাসেল মাহমুদের। সেই শখ থেকে প্রথম দিকে বাড়িতেই ২/৪টি করে গরু পালন করে মোটাতাজা করা শুরু করেন তিনি। বেশ মুনাফা পেয়ে বাণিজ্যিকভাবে গরুর খামার করার স্বপ্ন বুনেন তিনি। পরে আস্তে আস্তে খামারের পরিধিও বাড়ান তরুণ এ উদ্যোক্তা।  

প্রতিবছর কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে খামার বাড়াতে থাকেন। এরই মধ্যে পড়ালেখা শেষ করে তিন বছর আগে এনআরবি ব্যাংকে চাকরিও পান রাসেল। চাকরি করলেও গরুর খামার করে যান তিনি। বাড়ির গরু দেখাশোনা করেন তার বাবা জেন্দাল হক। হার্ডিসার গরু কিনে খামারে যত্ন করে গরু মোটাতাজা করা হয়।

আড়াই বছর আগে তার খামার দেখে কর্মসংস্থান ব্যাংক সহজ শর্তে প্রায় ৫৮ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করেন। সেই ঋণে খামার বড় করেন তিনি। এখন তার খামারে বিভিন্ন ওজনের ৭০টি গরু রয়েছে। গরুগুলোকে ঘাস, খড় আর ধানের গুড়া, ভুসি ছাড়া অন্য কিছুই খাওয়ানো হয় না। প্রাকৃতিক খাবারেই গড়ে উঠেছে তার খামার। এ কারণে তেমন কোনো রোগ বালাইও নেই খামারে।  

গরুর খাবারের জন্য প্রায় ছয় দোন (২৭ শতাংশে দোন) জমিতে উন্নত মানের ঘাসের চাষ করেছেন রাসেল মাহমুদ। এ ছাড়াও নিজেদের ১০ দোন জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ করে সেই ভুট্টা স্পালিং করে খামারেই ফিট প্রস্তুত করে গরুকে খাওয়ানো হয়। এই স্পালিং বাজারের ফিটের চেয়ে শতগুণ পুষ্টিকর ও নিরাপদ। এ কারণে তার খামারে রোগ বালাই অনেক কম। এছাড়াও প্রাণিসম্পদ অফিসের তত্ত্ববধানে নিয়মিত টিকা ও ভ্যাকসিন দেওয়া হয় গরুদের।  

প্রথমদিকে নিজে খামারে কাজ করলেও বর্তমানে খামার বড় হওয়ায় এবং তার নিজের চাকরির সুবাদে বাহিরে থাকায় পাঁচজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন তার খামারে। আর রাসেলের বাবা জেন্দাল হক গরুগুলো খাওয়ানো করেন। কর্মস্থলে থেকেও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে খামার দেখে পরামর্শ দেন রাসেল।  

রাসেল মাহমুদের বাবা জেন্দাল হক বলেন, আগে ব্যবসা করতাম। ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করতেন। এখন বড় ছেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে, ছোট ছেলে ব্যাংকার, দুই মেয়ে কলেজের শিক্ষক। ছোট বেলা থেকে রাসেল মাহমুদের গরু ছাগল পালনের প্রতি বেশ ঝোঁক ছিল। পরে দিন দিন খামার গড়ে তুলেন। এখন ছেলের খামার দেখাশোনা করি। শ্রমিকরা কাজ করে। আমি সন্তানের মতই গরুগুলোর যত্ন নিয়ে থাকি। আমরা ঘাস, খড়, ভুসি, আর ধানের গুড়া খাওয়াই। কোনো ধরনের ইনজেকশন দেওয়া হয় না।  

তিনি আরও বলেন, খামারে কখন কি করতে হবে আমাদের প্রদান দেন উপজেলা প্রাণিসম্পদের লোকজন। এবারে ঈদের জন্য ২৫টি গরু প্রস্তুত করছি। এসব গরু মাত্র আট মাসে আগে ৮০/৯০ হাজার টাকা দরে ক্রয় করে পরিচর্যা করেছি। এখন একেকটি ওজন প্রায় ৮/৯ মণ। বাজার মূল্য দুই লাখের ওপর।  

রাসেল মাহমুদ বলেন, অনেকেই গরু মোটা করতে ইনজেকশন ব্যবহার করেন। আমাদের খামারে সম্পূর্ণ ইনজেকশন মুক্ত এবং প্রাকৃতিক খাবারেই বড় হচ্ছে এসব গরু। কোরবানির জন্য ২৫টি গরু প্রস্তুত রয়েছে। বাহিরের কিছু ব্যাপারী অনলাইনে যোগাযোগ করছে। তবে গত বছরের মত চাহিদা নেই। ঈদ বাজার ঘনিয় এলে চাহিদা যেমন বাড়বে তেমনি ব্যাপারীরাও ভিড়বে। তবে ভারতীয় গরু আসায় বাজারে গরুর চাহিদা কমেছে এবং লোকসানের শঙ্কা করছে খামারিরা।

কোরবানির পশু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগে অনলাইন প্লাটফরমে যুক্ত হয়েছি। সেখানেও বেশ সাড়া পাচ্ছি। তবে কিছু দিনের মধ্যে গরু বিক্রি করবেন বলেও জানান খামারি রাসেল মাহমুদ।  

আদিতমারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. স্বপন চন্দ্র সরকার বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ দেশি খাবারে গড়ে উঠেছে এই খামার। এখানে খামারি নিজে ভুট্টা গাছ থেকে ফিট তৈরি করে গরুকে খাওয়ান। যা স্পাইলিং বলে। এটা খুবই পুষ্টিকর ও নিরাপদ। এ খামারের মাংস শতভাগ স্বাস্থ্য সম্মত। আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগ এ খামারিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছি।  

তিনি আরও বলেন, আসন্ন ঈদে কোরবানির জন্য জেলায় প্রায় ১৮ হাজার পশু প্রস্তুত রয়েছে। যার মধ্যে এ উপজেলায় রয়েছে সাড়ে তিন হাজার।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।