ঢাকা: এবারের বাজেট অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, মাছ ধরতে গেলে আধার দিতে হয়।
শুক্রবার (৭ জুন) ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন ৷ রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা প্রশ্ন আছে যে কালো টাকা (সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে), তাহলে (এই সুযোগের কারণে) আর কেউ ট্যাক্স দেবে না...। ঘটনা কিন্তু তা না। শুধু কালো টাকা না, জিনিসের দাম বেড়েছে, এখন এক কাঠা জমি যার, সেই কোটিপতি। সরকারি যে হিসাব- ট্যাক্স দেয় না, কিছু বেশি দামি, কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হয়। টাকাটা গুটিয়ে রাখে, সামান্য কিছু দিয়ে এলেও টাকাটা পথে আসুক, জায়গা মতো আসুক। তারপর তো ট্যাক্স দিতেই হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, মাছ ধরতে গেলে তো আধার দিতে হয়। দিতে হয় না? আধার ছাড়া তো মাছ আসবে না। এরকম একটা ব্যবস্থা এটা, এটা আসলে আগেও হয়েছে। সেই কেয়ারটেকার আমলে শুরু করেছিল, তারপর প্রত্যেক সরকারই করে। আমি এবারও সেই সুযোগটা দিয়েছিলাম- ঠিক আছে তোমরা এই অল্প ট্যাক্স দিয়ে আগে টাকাটা ব্যাংকে নিয়ে আসো। অন্তত টাকাটা উদ্ধার হোক, সেই ব্যবস্থাটাই নেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে নানা কথা, নানান জনের।
‘কিন্তু তারপরও আমরা যেগুলো মানুষের জন্য প্রয়োজন সেখানে কিন্তু ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি। প্রত্যেকটা খাদ্যপণ্য, চিকিৎসার ক্ষেত্রে, ক্যানসার, ডায়াবেটিস সমস্ত কিছুর ওপর থেকে ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি। স্বাস্থ্য সেবা, কৃষি উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা, দেশীয় শিল্পকে প্রাধান্য দেওয়া, দেশীয় শিল্প উৎপাদনের যেগুলো ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ কাঁচামাল, সেগুলোকে আমরা সুরক্ষা দিয়েছি, যাতে বেশি ট্যাক্স দিতে না হয়, সেগুলো আমরা কমিয়েছি। সেভাবে কিন্তু আমাদের বাজেটটা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই দিয়েছি। আমি জানি কারও ভালো লাগে, কারও ভালো লাগে না। এটা তো আছেই কোনো কিছুই ভালো লাগবে না সেরকমই। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেট ঘাটতি, এটা নিয়েও অনেকে কথা বলে। আমি সরকারের আসার পর এ পর্যন্ত ২১তম বাজেট দিলাম। সবসময় আমরা পাঁচ শতাংশের মধ্যে বাজেট ঘাটতি রাখি। এবারও কিন্তু ৪ দশমিক ৬ শতাংশ রাখা হয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশ আছে, এমনকি উন্নত দেশ, আপনারা খোঁজ নেন, আমেরিকার বাজেট ঘাটতি কত। উন্নত দেশেও এর থেকে বেশি বাজেট ঘাটতি থাকে। আমরা কিন্তু একটা হিসাব রেখে যতই অসুবিধা হোক, সেটা অব্যাহত রাখছি। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণটা, বিশেষ করে খাদ্যমূল্যের। সেখানে উৎপাদন এবং সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্ব পরিচিতি মাথায় রেখেই আমাদের কিন্তু পরিকল্পনা করে চলতে হবে।
সমালোচকদের বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের দেশে কিছু ভালো লাগে না গ্রুপ আছে, তাদের ভালো না লাগাই থাক, ওগুলোয় কান দেওয়ার দরকার নেই। কারণ এটা যুগ যুগ ধরে আমি দেখি, এটা নতুন না। যখন কোনো অস্বাভাবিক সরকার আসে তখন তারা খুব খুশি হয়। সামরিক শাসন আমলে খুশি ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে খুশি ছিল। তাদের নাকি গুরুত্ব থাকে। আর জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তাদের নাকি কিছুই হয় না, মূল্যায়ন হয় না। মূল্যায়নটা করব কীভাবে, দাঁড়িপাল্লা ঠিক করে উঠিয়ে মাপবো নাকি।
‘মূল্যায়ন তো আমরা দেখেছি কেয়ারটেকারের সময়, তাদের চরিত্র। কীভাবে তেল মারে একটা অগণতান্ত্রিক সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন। আমাদের তো ওই তেল মারার শক্তির দরকার নেই, আমাদের শক্তি জনগণ। জনগণের জন্য কাজ করি। জনগণের কল্যাণ করি, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেভাবে প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নেই, মানুষের যেন কষ্ট না হয়। জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে, বিশ্বাস রেখেছে, তাদের ভোটেই আমরা জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে একটানা এই চতুর্থবার, এর আগে ছিলাম পাঁচ বছর। আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই বিশ্বে বাংলাদেশ আজকে বাঙালি জাতি সম্মান নিয়ে চলতে পারে। আজকে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলে। সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটানোর ক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে’, যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ- এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ঘূর্ণিঝড়ের পর দেখতে গেলাম ওই কলাপাড়া। এক সময় কলাপাড়ার কিছুই ছিল না। শুধু মাঠ, ভালো ঘরও নেই। আজকে সেখানে দালান কোঠা, সবকিছু এমনকি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে, পার্লারও আছে। এই যে পরিবর্তনটা, এটা তো আমরা আনতে পেরেছি। সেটাই হচ্ছে আমাদের বড় অর্জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২৪
এসকে/এইচএ/