ঢাকা: স্বামী, দুই শিশু সন্তান ও মাকে নিয়ে আসবাবপত্রের দোকানে গেলেন এক নারী। দোকানে ঘুরে ঘুরে পছন্দ করলেন ওয়ারড্রব ও ডাইনিং টেবিল।
রোববার (১৬ জুন) বিকেলের দিকে ঘটনার বিস্তারিত বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স গৌরী রানী দেবনাথ। এ ব্যাপারে তিনি থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
গৌরী রানী জানান, শনিবার সন্ধ্যার দিকে রামপুরা হাজীপাড়ায় অবস্থিত দোয়েল ফার্নিচার নামে একটি আসবাবপত্রের দোকানে যান তিনি কিছু মালামাল কিনতে। তার সঙ্গে ছিলেন স্বামী মার্চেন্ডাইজার সুজন সরকার, তাদের দুই শিশু সন্তান ও তার মা। দোকানে ঘুরে ঘুরে একটি ওয়ারড্রব ও একটি ডাইনিং টেবিল তাদের পছন্দ হয়। দামাদামির পরে আসবাবপত্র দুটির মূল্য নির্ধারণ হয় ২৮ হাজার টাকা।
এ সময় দোকানের ভেতর অবস্থান করা মুখে মাস্ক পরিহিত এক যুবক কাছে ২৮ হাজার টাকা নগদ মূল্য পরিশোধ করেন গৌরী রানী। দোকানের ক্যাশ কাউন্টারের বসা ছিলেন মো. হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তার সামনেই পাশে বসা সেই যুবকের কাছে ২৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। টাকা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যান সেই যুবক, তার পরনে ছিল নীল গেঞ্জি।
গৌরী রানী বলেন, দোকানে বসা অবস্থায় যুবকটি টাকা বুঝে নেওয়ার সঙ্গে আমাদের সামনে দিয়েই দোকানের বাইরে চলে যান। আমরা মনে করেছিলাম, হয়তো বা ভ্যান গাড়ি ডাকতে গিয়েছেন আমাদের মালামাল বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এর কিছুক্ষণ পরেই দোকানে থাকা হোসেনের কাছে বিল পরিশোধের কাগজ চাইলে তিনি বলেন, টাকা দেন। এই কথা শুনে আমরা হতভম্ব হয়ে পড়ি। তখন আমরা বললাম, আপনার সামনেই তো ওই যুবককে টাকা দিলাম। তখন তিনি বললেন, সেই যুবক তো আমাদের কেউ না, আমি তো মনে করেছি আপনাদের লোক। এ কথা শোনামাত্র আমার স্বামী রাস্তায় বেরিয়ে খোঁজ করতে থাকেন টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া যুবককে। তখন আশেপাশের লোকজন জানান, এক যুবক মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় ভিক্টর নামে একটি বাসে উঠে গেছে।
এরপরে দোকানে অবস্থান করা ম্যানেজার হোসেন জানান, ওই যুবক তো দোকানের ভেতরে আপনাদের সঙ্গে ঘুরছিল। আমি তো মনে করেছি আপনাদের লোক। জবাবে গৌরী রানী বলেন, আমরাও তো মনে করেছি, তিনি দোকানের লোক।
গৌরী রানী দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, যতটুকু মনে পড়ে আমরা দোকানে প্রবেশের আগে থেকেই ওই যুবক দোকানে অবস্থান করছিলেন। ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ফার্নিচার দেখছিলেন। পরে দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দোকানে আমরা যখন ঘুরে ঘুরে ফার্নিচার দেখছি সেই প্রতারক যুবকও আমাদের পিছে পিছে হাঁটছেন। আমরা দোকানের দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নামছি, সেও নামছে।
তিনি বলেন, এই বিষয় নিয়ে রামপুরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়গুলি এখন পুলিশ বের করবে।
দোয়েল ফার্নিচারের ম্যানেজার মো. হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, পরে বুঝতে পেরেছি যে যুবকটি ছিল ভয়ংকর প্রতারক। বছরের পর বছর আমি ফার্নিচার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। দোকানের ভেতরে এরকম প্রতারণার কথা কোনদিন শুনিনি। দোকানে ওই প্রতারক প্রবেশ করেছে কাস্টমারের পিছনে পিছনেই। আগে থেকে প্রতারক যুবক দোকানে ছিল না। আমার মনে হয়, সেই প্রতারক কাস্টমারদের রাস্তা থেকেই ফলো করেছে। আমার দোকানে প্রবেশ করার পরে আমার কর্মচারী আল-আমিন সেই যুবককে জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি কি এই কাস্টমারদের লোক সেই যুবক মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। মালামালের দামাদামি কনফার্ম হওয়ার পরে কাস্টমারদের আমি নাস্তা দিয়েছি, বাচ্চাদের চিপস দিয়েছি। সেই প্রতারক যুবক তখনও মাস্ক খোলেনি, কিছুই খায়নি। আমাদের দোয়েল ফার্নিচারের মালিক মিরাজ হোসেন বিষয়টি শুনে হতবাক। আমরা পুলিশকে যতটুক সহযোগিতা করার সব রকম সহযোগিতা করব, যাতে ওই প্রতারককে গ্রেপ্তার করতে পারে।
ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রামপুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস বসাক জানান, দোয়েল ফার্নিচারের দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হয়েছে। ঈদের ছুটির কারণে দোকানের অনেক কর্মচারী ছুটিতে গিয়েছে। বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমানের বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। তদন্তের পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৪
এমজেএফ