ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

যমুনার পাড়ে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড়

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৪
যমুনার পাড়ে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড়

সিরাজগঞ্জ: বর্ষার শুরুতে সদ্য যৌবনবতী যমুনার অপরূপ সৌন্দর্য বিনোদনপ্রেমীদের এবার অনেক বেশি আকৃষ্ট করেছে। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ ও যমুনার বুকে নির্মিত চারটি ক্রসবার বাঁধে হাজার হাজার বিনোদনপ্রেমীর উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

এক সময়ের রাক্ষসী যমুনা এখন বিনোদনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে সিরাজগঞ্জবাসীর জন্য।

ঈদের দিন থেকেই সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ, হার্ড পয়েন্টে, মোল্লাবাড়ী ক্রসবার বাঁধ, শৈলাবাড়ী ক্রসবার বাঁধ, খোকশাবাড়ী ক্রসবার বাঁধ ও পাইকপাড়া এলাকার ক্রসবার বাঁধগুলোতে নারী, পুরুষ, ছেলেবুড়ো সব বয়সী মানুষের ভিড় দেখা যায়। প্রতিদিন বিকেল হলেই প্রকৃতিকন্যা যমুনার নির্মল বাতাসে গা ভাসিয়ে দিতে উদগ্রীব মানুষগুলো এখানে ছুটে আসেন। যমুনাও তার স্নিগ্ধ সমীরণ ঢেলে ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি প্রাণ জুড়িয়ে দেয় প্রকৃতি প্রেমীদের।

বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে যমুনার শহরের ৩ নম্বর ক্রসবার বাঁধ এলাকায় আসেন ব্যাংকার শহিদুল ইসলাম।  

জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, চিত্ত বিনোদনের জন্য যমুনা পাড়ের চেয়ে সুন্দর আর কোনো জায়গা নেই।

কলেজছাত্র বর্ষণ, রুদ্র ও সৈকত বলেন, বিকেল হলেই আমরা এখানে যমুনার স্নিগ্ধ বাতাস খেতে ছুটে আসি। প্রতিটা ছুটির দিনেই আসি, একদিন হার্ড পয়েন্টে, কোনোদিন ৩ নম্বর ক্রসবার বাঁধ আবার কোনো দিন অন্য ক্রসবার বাঁধে ছুটে যাই।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে একজন স্কুল শিক্ষিকা বলেন, প্রতিটি মানুষের কাজের পাশাপাশি চিত্ত বিনোদনের প্রয়োজন আছে। আর বিনোদনের জন্য সিরাজগঞ্জের চারটি ক্রসবার বাঁধের মতো সুন্দর জায়গা আর হয় না।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রিয়াদ রহমান বলেন, সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় আগ্রাসী যমুনা সৌন্দর্যময়ে পরিণত হয়েছে। এখানে এখন হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে নির্মল বিনোদন উপভোগ করে।

জানা গেছে, দফায় দফায় ভাঙনে সিরাজগঞ্জ জেলা শহরটিকে প্রায় গ্রাস করতে বসেছিল যমুনা নদী।

শহর রক্ষায় ১৯৯৯ সালে শহরের মতি সাহেবের ঘাট থেকে কাজিপুর নৌকাঘাট পর্যন্ত ২ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শহর নির্মাণ করা হয়। শহর রক্ষা এই বাঁধের উত্তরে যমুনার বাঁকে শক্তিশালী ‘হার্ডপয়েন্ট’ নির্মাণ হয়। যমুনার তলদেশে ১০০-১২০ মিটার পর্যন্ত সিসি ব্লক দিয়ে গেঁথে তোলা বাঁধের উপরিভাগে নির্মাণ হয় ২০ মিটার প্রশস্ত পাকা সড়ক। বাঁধটি নির্মাণের পর এটি দেখতে সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ আসতে থাকে। এভাবেই এটি বিনোদনের তীর্থে পরিণত হয়। বাঁধের জেলখানা ঘাট এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বই ভাস্কর্য ‘মুজিব দর্শন’। যেখানে বঙ্গবন্ধুর লেখা বইগুলোর প্রচ্ছদে বিশালাকৃতির ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে।  

অপরদিকে, ২০২৩ সালে বাঁধের উত্তরাংশে হার্ডপয়েন্টে স্থাপন হয় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ভাস্কর্য। এ ভাস্কর্য দুটি দর্শনার্থীদের আরও আকৃষ্ট করছে।  

২০১৭ সালে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের লক্ষ্যে যমুনার বুকে আড়াআড়ি ভাবে চারটি ক্রসবার নির্মাণ করা হয়। ক্রসবারগুলোর দৈর্ঘ্য এক থেকে প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটারের মতো।

ক্রসবারগুলো মূল বাঁধ থেকে লম্বালম্বিভাবে যমুনা নদীর মাঝখানে গিয়ে শেষ হয়েছে।  

৩ ও ৪ নম্বর ক্রসবার বাঁধ এখন বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র। এ বাঁধের দুপাশে রোপণ করা হয়েছে গাছ। জেলা শহর থেকে মোটরসাইকেল কিংবা রিকশাযোগে একেবারে যমুনার মাঝখানে গিয়ে নির্মল আনন্দ উপভোগ করে মানুষ।

সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ডা. জহুরুল হক রাজা বলেন, সিরাজগঞ্জবাসীর সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া যমুনা আজ আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদ উপলক্ষে শহর রক্ষা বাঁধের পাশাপাশি ক্রসবারগুলোতে ব্যাপক মানুষের সমাগম হয়। একটু প্রশান্তির জন্য এখানে ছুটে আসে মানুষ।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রণজিৎ কুমার সরকার বলেন, যমুনার ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ শহরকে রক্ষায় ১৯৯৯ সালে হার্ডপয়েন্ট নির্মাণ করা হয়। তখন থেকেই এটিকে বিনোদনের স্থান হিসেবে বেছে নেয় সিরাজগঞ্জবাসী। গত বছর হার্ডপয়েন্টের মাঝামাঝি স্থানে ‘মুজিব দর্শন’  নামে বঙ্গবন্ধুর বই ভাস্কর্য ও উত্তরের অংশে চলতি বছরের মে মাসে ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য। ফলে হার্ডপয়েন্ট এখন পরিপূর্ণ বিনোদনকেন্দ্রের পরিণত হয়েছে। এছাড়া চারটি ক্রসবার বাঁধও বিনোদনের তীর্থ পরিণত হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।