ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গোপালগঞ্জে ‘কথা বলা গাছ’ দেখতে মানুষের ঢল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৪
গোপালগঞ্জে ‘কথা বলা গাছ’ দেখতে মানুষের ঢল

গোপালগঞ্জ: গাছের প্রাণ আছে, তাই বলে কথা বলছে গাছ! গোপালগঞ্জে এমন গুজব রটেছে। আর সেই গুজবে কান দিয়ে  ‘কথা বলা গাছ’ দেখছে মানুষের ঢল নেমেছে।

 

বলা হচ্ছে, জেলার মুকসুদপুর উপজেলার গর্জিনা গ্রামে একটি গাছ কথা বলছে। এই ঘটনা দেখতে ও গাছের সঙ্গে কথা বলতে সেখানে প্রতিদিন ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ।

তবে স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম বলছেন, গাছ কথা বলছে না; এটি জিনের কাণ্ড হতে পারে।  

এলাকাবাসী জানায়, গত ১৪ জুন গর্জিনা গ্রামে সৌদিপ্রবাসী সবুর মিয়ার বাগানে আফ্রিকান মেহগনি প্রজাতির একটি গাছে স্থানীয় জুয়েল মোল্লার ছেলে নীরবসহ (১০) কয়েকজন শিশু ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। শোনা যাচ্ছে, তারা কোপ দিতেই গাছটি নাকি কথা বলে ওঠে।

শিশুরা ভয় পেয়ে বাড়ি গিয়ে পরিবারের লোকজনের কাছে বিষয়টি জানালে তারা গাছটি দেখতে আসেন। এসময় গাছের গায়ে কান পেতে রাখলে এর ভেতর থেকে আওয়াজ শুনতে পান বলে জানান তারা।

এরপর থেকে কল্পকাহিনির মতো ‘গাছ কথা বলছে’- প্রচার হতে থাকে আর সে কথা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে মুকসুদপুরসহ আশপাশের এলাকায়।  

এ খবর শুনে দলে দলে লোকজন আসতে থাকেন, কেউ কেউ নানা মানতও করতে শুরু করেন। আর কিছু ইউটিউবার বেশি ভিউ পেতে ব্যাপারটিকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করতে থাকে।  

এসব ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের লোকজনও চাঞ্চল্যকর এই খবরটিকে সত্য ভেবে গাছটিকে দেখতে গর্জিনা গ্রামে আসতে থাকেন।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত গাছটি দেখতে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, বরিশাল, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে লোকজন এসে ভিড় করতে শুরু করে দেন।  

স্থানীয় রাঘদি ইউপি মেম্বার সাদ্দাম হোসেন বলেন, কৌতূহলী মানুষ গাছের গায়ে কান পেতে কথা শোনার চেষ্টা করেন। শুধু বড়রাই নয়, শিশুরাও গাছে কান পাতে। এতে অনেক দর্শনার্থী গাছের কথা শুনতে পান দাবি করে একে অলৌকিক ঘটনা বলে প্রচারও করেছেন। পরে একটি মহল গাছটির চারপাশে বাঁশ দিয়ে বেড়িকেট দিয়ে। যদিও সেই বেড়িকেট ভেঙে দেন স্থানীয় যুবকেরা।  

তবে অনেকেই গাছের কথা বলার বিষয়টি বিশ্বাস না করলেও এটি জিনের কাণ্ড বলে দাবি করছেন।  

স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ বাদশা জানান, এ ধরনের ঘটনা ইসলাম সমর্থন করে না। তবে জিনকে গাছের মধ্যে আটকে রাখার কারণে এমনটি হয়ত হচ্ছে।

সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শুকলাল বিশ্বাস বলেন, ‘গাছ কথা বলে এটি সম্পূর্ণ গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ শব্দ করতে হলে তার ভোকাল সিস্টেম থাকতে হবে। জড় বস্তুর আঘাতজনিত কারণে শোঁ শোঁ শব্দ হয়। আর এখানে নাকি সালামের উত্তর দিচ্ছে গাছ!  এটা আমার কাছে গুজবই মনে হচ্ছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা ঠিক গাছের প্রাণ আছে, কোষ দ্বারা গঠিত, কোষ একটি জীবন্ত সত্তা। তবে প্রাণী চলাচল করতে পারে, উদ্ভিদ চলাচল করতে পারে না। তবে উদ্ভিদের ব্যথা-বেদনা, দুঃখ সবই আছে। তবে কথা বলে এটি আমি প্রথম শুনলাম, এটি পুরোটাই গুজব। ’

গাছটি দেখতে প্রতিদিনই শত শত মানুষ ছুটে আসায় স্বার্থান্বেষী কোনো মহল এটি নিয়ে ব্যবসা করতে যাতে না পরে সে ব্যাপারে এখন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।  

তা না হলে এখানে এসে মানুষ প্রতারিত হতে পারে বলে মন্তব্য সচেতন মহলের।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।