ঢাকা: দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোকে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, আমরা আগেও দেখেছি, একটি বিশেষ মহল সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
তিনি আরও বলেন, ইচ্ছেকৃতভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ পরিবেশিত হলে, বুঝতে হবে এটি ষড়যন্ত্রের অংশ। তদন্তের আগে গণমাধ্যমের সামনে কাউকে দুর্নীতিবাজ বলাও সমীচীন নয়।
সোমবার (২৪ জুন) আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।
হাছান মাহমুদ বলেন, অবশ্যই দুর্নীতির সংবাদ আসবে এবং তা দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বনে প্রয়োজন রয়েছে। কোনো নিরপরাধ মানুষ যাতে ভিকটিম (ভুক্তভোগী) না হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস হিসেবে যেন কোন সংবাদ পরিবেশন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি বলেন, গত নির্বাচনের আগে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। প্রথমে নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সেই ষড়যন্ত্র বানচাল হওয়ার পর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল সরকার যেন বিশ্ব দরবারে সমাদৃত না হয়। ৮০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চিঠি লিখে সরকারের সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এরপর বিএনপির বেলুন ফিউজ হয়ে গেছে। এখন তারা অভ্যন্তরীণ সংকটে নিমজ্জিত। সে কারণে দেখা যায়, মধ্যরাতে কমিটি বাতিল, আবার ভোররাতে আরেকজনকে বহাল। এটি বিএনপির মধ্যে এখন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই, তারা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে কীভাবে?
বিএনপির মধ্যে গণতন্ত্র নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে পত্রিকায় একটি শিরোনাম দেখলাম- মহাসচিবের খোঁজে বিএনপি। একটি দলের আট থেকে নয় বছর কোনো সম্মেলন হয় না। আবার দেখলাম কয়েক ডজন পদ কোনো সম্মেলন ছাড়াই তারা পূরণ করে দিয়েছে। মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটরেরা যেভাবে কলমের খোঁচায় কাউকে বরখাস্ত করতেন এবং দলে অন্তর্ভুক্ত করতেন, ঠিক একই কায়দায় দেশের বাইরে থেকে কে কোন পদ পাবেন, সেটি তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঠিক করে দিচ্ছেন। যাদের নিজেদের দলেই কোন গণতন্ত্র নেই, তার আবার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে!
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মহাসচিবের খোঁজে বিএনপি- পত্রিকায় এ শিরোনাম দেখার দুদিন পর দেখলাম মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কাঁদছেন। পত্রিকায় এসেছে বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ বিধায় তিনি কেঁদেছেন। বেগম খালেদা জিয়া তো বহুদিন ধরে অসুস্থ। এতদিন তো কান্না দেখিনি। মহাসচিব খোঁজার শিরোনামের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কান্নার কোনো সংযোগ আছে কি না, তা খুঁজে দেখার বিষয়।
আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বিএনপির অনেক কিছু শেখার আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি তিন বছর অন্তর সম্মেলন হয়। কলমের খোঁচায় আওয়ামী লীগ থেকে কাউকে অব্যাহতি দেওয়া হয় না, দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের সৌন্দর্য হলো- দলটি নেতার দল নয়, কর্মীদের দল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্যান্য দলের পার্থক্য হলো, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা আছে, আর বিএনপিসহ অন্যান্য দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা নেই।
হাছান মাহমুদ বলেন, যখন আওয়ামী লীগ সংকটময় মুহূর্তে পড়তে যাচ্ছিল, তখন দলের ঐক্যের প্রতীক হয়ে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাকে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে তিনি মায়ের মমতায়, বোনের স্নেহে কর্মীদের আগলে রেখে সংগঠিত করেছেন।
তিনি বলেন, ২১ বছর ধরে আমরা শুনেছিলাম, আওয়ামী লীগ কখনো ক্ষমতায় যাবে না। আমরা অনেক টিটকারির শিকার হয়েছিলাম। সেই আওয়ামী লীগকে তিনি (শেখ হাসিনা) রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে গেছেন। পরপর চারবার আজ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায়। এর প্রধান কারণ হলো জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, একতা এবং সংকটে থেকেও তা মোকাবেলা করার সাহস, দৃঢ়তা ও বুদ্ধিমত্তা।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি অরূপ রতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য বলরাম পোদ্দার, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক আলী শিকদার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৪
এসসি/আরএইচ