ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

দায় সারার চেষ্টা করছে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

অতিথি করেসপন্ডেন্ট, সাভার (ঢাকা) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২৪
দায় সারার চেষ্টা করছে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

সাভার (ঢাকা): গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঁচ শয্যা বিশিষ্ট নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু করতে ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাসরিন বেগম। তিনি করোনাভাইরাস মহামারিতে প্রাণ হারানো মেধাবী শিক্ষার্থী সাবরিনা কামাল তন্বীর মা।

মেয়েকে স্মরণ করে রাখতে নাসরিনের দেওয়া এ অনুদান পেয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সাভারে তাদের আইসিইউ উদ্বোধন করে। কিন্তু এরপর থেকে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। অর্থাৎ, শুধু নামকাওয়াস্তে আইসিইউ রাখা হয়েছে, কিন্তু সেটি আদৌ কোনোদিন চালু হয়নি।

সম্প্রতি গণস্বাস্থ্যে মেয়ের স্মরণে দেওয়া ‘আইসিইউ’ কেবল নামেই, অনুদানের ৫০ লাখ কোথায় শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে বাংলানিউজ। গত ৮ জুন এ সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তাই তড়িঘড়ি করে ‘সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র’ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দায় সারার চেষ্টা করছেন।

একটি সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, গণস্বাস্থ্যের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের পুরো কক্ষ পরিষ্কার করে কয়েকটি নতুন সরঞ্জাম স্থাপন করেছে। কিন্তু অনুদান গ্রহণ ও উদ্বোধনের তিন বছরেও কেন আইসিইউ চালু করা হয়নি এমন প্রশ্ন ঘুরে ফিরছে জনগণের মনে।

সরেজমিনে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে দেখা গেছে, সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের ভেতরে থাকা কেমিকেল জারের স্তূপ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরিষ্কার করা হয়েছে পুরো কক্ষ। পাঁচ শয্যার তিনটিতে নতুন বিছানা-পত্র দেওয়া হয়েছে। দুটি শয্যা আবার ডায়ালাইসিস সেন্টারের।

আরও সংযুক্ত করা হয়েছে দুটি যান্ত্রিক ভেন্টিলেটর, একটি কার্ডিয়াক মনিটর ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। এর আগে গত ৮ জুন ওই কক্ষটি কেমিকেলের জারে ঠাসা অবস্থায় দেখা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা এ সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা প্রদানের শর্তে ৫০ লাখ টাকা অনুদান পাওয়ার পর সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর তৎকালীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আইসিইউটি উদ্বোধনও করেন। কিন্তু সেটি আলোর মুখ দেখেনি; তা ছাড়া অনুদান পাওয়া ৫০ লাখ টাকার কোনো হিসাবও পাওয়া যায়নি।

গণস্বাস্থ্যের ডায়ালাইসিস সেন্টারের বায়োকেমিস্ট প্রকৌশলী মো. সাগর বাংলানিউজকে বলেন, খুব দ্রুত আইসিইউ চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অধীনে ছিলাম। আমাকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমি তাই করেছি।

তিনি বলেন, যেহেতু সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রটি আমার ডায়ালাইসিস সেন্টারের পাশেই, তাই কক্ষটির কিছু জিনিসপত্র ডায়ালাইসিস সেন্টারে ব্যবহার করা হয়েছে। ডায়ালাইসিস সেন্টারের কেমিকেল জার আইসিইউ কক্ষে রাখা হয়েছিল। আমি নিজ দায়িত্বে এসব পরিষ্কার করেছি।

তার কথায় প্রতীয়মান হয়, নতুন যন্ত্র স্থাপন করে দায় সারার চেষ্টা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। সাগর আরও বলেন, যে যন্ত্রপাতি রয়েছে তাতে আরও কিছু যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করা গেলে দুটি শয্যা চালু করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত সেবিকা নিয়োগ দিতে হবে।

বাকি তিন শয্যার যন্ত্রপাতি সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি সাগর। তার দাবি, অনুদান গ্রহণের পর পাঁচটি শয্যার জন্য যন্ত্রপাতি ওষুধসহ ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু সেসব যন্ত্রপাতি ও ওষুধ দেখাতে পারেননি তিনি।

এ ব্যাপারে অনুদান দাতা ও ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাসরিন বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমি যে অর্থ দান করেছি সেগুলো আমার শ্রম ও কষ্টার্জিত। গরিব মানুষের চিকিৎসার স্বার্থে আমি এ অর্থ দান করেছিলাম, যাতে তাদের দোয়ায় আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পায়। কিন্তু কয়েকজন মিলে টাকাগুলো লোপাট করেছে। তারা আমার আবেগ নিয়ে খেলা করেছে। তাদের শাস্তি অবশ্যই হওয়া উচিৎ।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আইসিইউর কিছুই সেখানে নেই, তাহলে হবে কীভাবে? যেহেতু গত তিন বছরে সেখানে আইসিইউর কোনো কার্যক্রম চালু হয়নি, এমনকি একজন রোগীকেও চিকিৎসা দেওয়া হয়নি সেহেতু আমি আমার টাকাগুলো ফেরত চাই। এ ব্যাপারে বর্তমান ট্রাস্টি নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. নাজিম উদ্দীন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু গুটিকয়েক কর্মকর্তার জন্য গণস্বাস্থ্যের বদনাম হচ্ছে সেহেতু আমরাও এটার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আমরা গণস্বাস্থ্যের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এসব আমার অজান্তেই হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সাবরিনার মা অধ্যাপক নাসরীন বেগম এবি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের দুটি চেকের মাধ্যমে পাঁচ শয্যার আইসিইউ সেন্টার স্থাপনের জন্য গণস্বাস্থ্যকে ৫০ লাখ টাকা অনুদান দেন। তৎকালীন সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়ক ডা. মঞ্জুর কাদির ওই অর্থ উত্তোলন করে সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপনে ব্যবস্থা নেন। একই বছরের ২৯ অক্টোবর আইসিইউ কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে নাম ছাড়া ওই আইসিইউ কক্ষের কোনো সুবিধা নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।