লালমনিরহাট: পানি কমলেও লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলার পাড়ে বেড়েছে ভাঙন। গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ডাউয়াবাড়ি গ্রামের ১৮টি বসতভিটা তিস্তার বুকে হারিয়ে গেছে।
জানা গেছে, তিস্তা, ধরলা আর সানিয়াজান নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলাকে দুই দিকে ঘিরে রেখেছে তিস্তা আর ধরলা নদী। জেলার উত্তর সীমান্তে ধরলা ও দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলছে তিস্তা নদী। প্রতি বছর নদী ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে বসতভিটা আর আবাদি জমি, না না স্থাপনা। দুই দিকের ভাঙনে জেলার মানচিত্র প্রতি বছর ছোট হচ্ছে। চরাঞ্চলের সংখ্যাও বাড়ছে লালমনিরহাটে।
তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাট। এ জেলার পাঁচটি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা। যার মধ্যে হাতীবান্ধা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন তিস্তার কড়াল গ্রাসে প্রতি বছর বিধ্বস্ত হচ্ছে। জেলার সদর উপজেলা ও আদিতমারীর কিছু এলাকার ওপর দিয়ে ধরলা নদী বয়ে গেছে। তিস্তা নদীর ভাঙনে লালমনিরহাটে পাঁচটি উপজেলাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ ইউনিয়নের উত্তর ডাউয়াবাড়ি গ্রামের ১৮টি পরিবারের আশ্রয়স্থল বসতভিটা বিলীন হয়েছে তিস্তার কড়াল গ্রাসে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার মাথা গোঁজার ঘর তোলার জমি খুঁজতে নাকাল। তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিলেও তা রাখার মতো স্থায়ী উঁচু জায়গা মিলছে না। মোটা অংকের টাকা দিলে বার্ষিক লিজ বা ভাড়ায় মিলছে। সেটাও বেশির ভাগ মানুষের সাধ্যের বাইরে।
উত্তর ডাউয়াবাড়ি গ্রামে নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে অস্থায়ীভাবে বসতি গড়তে আপাতত আলহাজ আছের মাহমুদ সরকারি গণনিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ ছেড়ে দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা আপাতত বিদ্যালয় মাঠে করছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। তবে বেশির ভাগই জায়গা না পেয়ে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধের ধারে ঘরবাড়ি আসবাবপত্র স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ আবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
শুধু হাতীবান্ধা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নই নয়, পাটগ্রামের দহগ্রাম, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ এলাকার চন্ডিমারী বাঁধ, তালেব মোড়ের ওয়াপদা বাঁধ, হাতীবান্ধা বাইপাস সড়ক, আদিতমারীর মহিষখোচার বাঁধসহ বিভিন্ন বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি কাজের অংশ হিসেবে স্পার বাঁধ ও চন্ডিমারী বাঁধ রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলছে।
উত্তর ডাউয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নুরল ইসলাম আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রশিদ, শাহাবুদ্দিন ও জয়নুল হক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আমাদের পাড়ার ১৮টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাকিগুলোও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। রাতে ঘুমাতে পারিনি। কখন যে ভেঙে যায় কষ্টে সাজানো বসতভিটা। অবশেষে সরাতেই হলো ঘর। এখন নতুন করে ঘরবাড়ি করার মতো কোনো জমি নেই আমাদের। আপাতত স্কুলমাঠে ঘরগুলো রেখেছি।
একই গ্রামের আতাউর রহমান বলেন, চোখের সামনে বসতভিটা নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। বুক ফেটে যায় সেই দৃশ্যের কথা মনে হলে। নিজের জমি বাড়ি ছিল। এখন বাড়ি করার মতো এক টুকরো জমিও রইল না। সরকারিভাবে টিন ও টাকা দিতে তালিকায় নাম দিয়েছেন চেয়ারম্যান। কবে আসবে সেই টিন, টাকা আল্লাহই জানেন। আমরা ত্রাণ নয়, চাই তিস্তা নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ। তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিস্তাপাড়ের মানুষ।
রোববার (৭ জুলাই) দুপুর ১২টায় হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯১ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে গত দুদিন বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ড নদী তীরবর্তী। সব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রায় অর্ধশত বাড়ি বিলীন হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে ভাঙনের শিকার হচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করে পাঠানো হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে পাঠাতে বলা হয়েছে। তালিকা ও বরাদ্দ এলে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২৪
এসআই