ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

তারা আমার বাবার বুকে গুলি করেছে: পলাশের মা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২৪
তারা আমার বাবার বুকে গুলি করেছে: পলাশের মা

টাঙ্গাইল: ফিরোজ তালুকদার পলাশ (৩৮), টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার ঘাটান্দি এলাকার এ বাসিন্দা রাজধানীর মিরপুর-১২ এলাকায় রংপুর কেমিকেল কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠানে সহায়ক (পিয়ন) হিসেবে কাজ করতেন। গত ২৯ জুলাই তিনি নিহত হন।

এদিন মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় পুলিশ। তখনই নিহত হন পলাশ।

রোববার (২৮ জুলাই) পলাশের বাড়ি যান বাংলানিউজের ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট। দেখেন নিহত ছেলের ছবি হাতে ঘরের দরজায় বসে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছেন মা বেনু বেগম। তিনি বিধবা। কান্না করতে করতে বেনু জানালেন, ঘটনার দিন তার কাছেই আসছিলেন পলাশ।

পলাশের কাঁচা টিনের ঘরে বিধবা বেনুর সঙ্গে কথা বলার সময় তার ঘরে ছিলেন ছোট ছেলের স্ত্রী ও কয়েকজন প্রতিবেশী। জানা গেছে, পলাশের স্ত্রী রেশমা খাতুন কাজে গেছেন। পরিবারের এই অবস্থায় কেন তিনি নেই, প্রশ্ন করা হয় প্রতিবেশীদের। উত্তরে যা জানা গেছে, তাদের কঠোর হৃদয়ের কোনো ব্যক্তির চোখেও পানি আসবে।

পলাশ নেই, ঘরে আয়ের লোকও নেই। ঘরে ছোট সন্তান, শাশুড়ির মুখেও খাবার নেই। যে কারণে পলাশের মৃত্যুর কয়েকদিন পর কাজে চলে যান রেশমা। স্বামীর অবর্তমানে তার ভার তো রেশমাকেই নিতে হবে!

প্রতিবেশীরা জানান, পাঁচ বছর আগে মিরপুর-১২ নম্বরে রংপুর কেমিকেল কোম্পানিতে কাজ নেন পলাশ। সেখানে তিনি পিয়ন হিসেবে কাজ করতেন। গত ১৯ জুলাই সারা দেশে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুরো দেশ যখন টালমাটাল, মায়ের জন্য মন উতলা হয়ে ওঠে পলাশের। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় স্ত্রী রেশমা তাকের বাধা দিচ্ছিলেন। সেটি উপেক্ষা করে মাকে দেখবেন বলে বাড়ির পথ ধরেন।

মিরপুর-১০ নম্বরে এসে বিপাকে পড়ে যান পলাশ। একদিকে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন, অন্যদিকে আইন শৃঙ্ক্ষলাক্ষাকারী বাহিনীর অনড়-কঠোর অবস্থান। হঠাৎ দুই পক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। এর মাঝে পড়েন পলাশ। পুলিশ গুলি চালায়।

পুলিশের গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন পলাশ। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে কয়েকজন নিয়ে যান আলোক হাসপাতালে। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর কেউ একজন পলাশের সঙ্গে থাকা মোবাইল থেকে বেনু বেগমকে কল করেন। জানান, শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষে গুলি খেয়েছেন পলাশ। পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে।

ছেলের এমন পরিণতির কথা বেনু কল দিয়ে জানান রেশমাকে। রেশমাও বাসা থেকে বেরিয়ে আলোক হাসপাতালে গিয়ে তার স্বামীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।

১৯ জুলাই রাতেই নিহত পলাশকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ভূঞাপুর পৌরসভার ঘাটান্দি এলাকায় নিয়ে আসা হয়। ২০ জুলাই সকালে তাকে ঘাটান্দির তালুকদার কবরস্থানে দাফন করা হয়।

পলাশের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ইশরাত জাহান সাবিনা জানান, তার ভাসুরের বুকে একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। তার পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়েছিল। পলাশের ৭ বছরের মেয়ে এতিম হলো। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেও পলাশ বাড়ি এসেছিলেন। তার অনেক স্বপ্ন ছিল।

ছেলের শোকে ন্যুজ বেনু বেগম বলেন, তারা আমার বাবার বুকে গুলি করছে। পুলিশের গুলি লাগছিল তার বুকে। আমার কাছে আইতে চাইছিল আমার বাবায়। গাড়ি পায় নাই। ওর অনেক স্বপ্ন ছিল, ওরে গুলি কইরা কইরা মাইরা হালাইলো। আমার নাতনি, ছেলের বউয়ের ভবিষ্যত কি হইবো? আমি বিচার চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।