ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘শেখ হাসিনাকে নামাতে পারলে গুটিকয়েক সন্ত্রাসী কোনো বিষয় না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৪
‘শেখ হাসিনাকে নামাতে পারলে গুটিকয়েক সন্ত্রাসী কোনো বিষয় না’

খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থী ও খুলনার অন্যতম সমন্বয়ক জহুরুল ইসলাম বলেছেন, শেখ হাসিনা পতনের পর দেশের মধ্যে একটা সন্ত্রাসী বাহিনী অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আমরা স্বৈরচারী শেখ হাসিনাকে যদি নামাতে পারি, এ ধরনের গুটিকয়েক সন্ত্রাসী আমাদের কাছে কোনো বিষয় না।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনার সমন্বয়কারীদের সঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনারের মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

এদিন বিকেলে কেএমপি সদর দপ্তরে খুলনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ কমিশনারের মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনার সমন্বয়কারীরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। বিকেল ৪টায় সভা শুরু হয়ে চলে প্রায় ৭টা পর্যন্ত। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়মান আহাদের সঞ্চালনায় সভায় প্রায় ১৯ জন সংগঠক শিক্ষার্থী পুলিশ কমিশনারের সামনে তাদের বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মীর মুগ্ধ এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ অন্যান্য নিহতের স্মরণে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়।

সভায় সমন্বয়ক জহুরুল ইসলাম বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আছে, সেগুলো অতি দ্রুত সংশোধন করে মাঠে নামতে হবে। সারা দেশে যে সন্ত্রাসী আক্রমণ, হামলা চলছে তা প্রতিরোধে পুলিশকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা খুলনা সদর থানার ওসিসহ যে-সব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে আপনারা (পুলিশ) মাঠে নামবেন এবং বাহিনীকে সংস্কার করবেন। এখানে কোনো ধরনের নয়-ছয় আমরা বরদাস্ত করব না। আমরা আপনাদের পর্যবেক্ষণে রাখব। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিরাপত্তা দিতে হবে। দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা কোনো লিঁয়াজোভিত্তিক প্রশাসন চাই না। কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসলে পুলিশের ভূমিকা কী হবে তা স্পষ্ট করতে হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, যদি সত্যিই আপনারা দেশকে ভালোবাসেন, দেশের মানুষের ভালো চান, নিজেদের উন্নয়ন না করে জনগণের উন্নয়ন করতে চান তাহলে আপনারা রাস্তায় আসুন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করুণ, ময়লাগুলো পরিষ্কার করুণ। আপনারা প্রমাণ করুণ আপনারা দেশের জন্য দশের জন্য আন্দোলনে ছিলেন।

সমন্বয়ক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, আমরা দেখতে চাই ভবিষ্যতে পুলিশ কোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবে না। তারা জনগণের পুলিশ হয়ে কাজ করবে। খুলনা জেলা ও নগরে পুলিশের কোনো রকম দুর্নীতি অনিয়ম করতে পারবে না, খুলনাকে সন্ত্রাসীমুক্ত ও চাঁদাবাজমুক্ত ঘোষণা করতে হবে। কোনো পুলিশ যদি কোনো অপরাধীকে আশ্রয় দেয় তাহলে তিনি খুলনায় থাকতে পারবেন না।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সমন্বয়ক ওমর ফারুক বলেন, হ্যালো কোটার মাধ্যমে চাকরি পাওয়া পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রবল অসহযোগিতা করায় কুয়েট ভিসি এবং তার অণুগতদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে।

সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক সরকারি বিএল কলেজের শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি মতামত জানিয়ে বলেন, যৌক্তিক সংগ্রামে বাধাদানকারী খুলনার অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও প্রাণনাশের সহায়তাকারী ছাত্রলীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক পুলিশিং কমিটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি বিএল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করতে হবে। কলেজ প্রশাসনের সহায়তায় পুলিশ প্রশাসনকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। ক্যাম্পাসে ভাঙচুর ও লুটপাটের পিছনে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।

খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের অন্যতম সমন্বয়ক সামিয়া সানজানা বলেন, খুলনার পুলিশ কোনো নির্দিষ্ট দলের অধীনে কাজ করতে পারবে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করতে হলে কলেজ প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য, পরিবহন ভাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে যেন কোনোভাবেই বেশি না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সেখানে আরও বক্তব্য রাখেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আল শাহরিয়ার, মিনহাজুল ইসলাম, বিপুল শাহরিয়ার, সাইফ নেওয়াজ, শাহাবুল, সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের শেখ রাফসান, তারেক রহমান, ব্রজলাল কলেজের রুমি আক্তার, খুলনা মেডিকেল কলেজের মুস্তফা জায়েদ, সরকারি পাইওনিয়ার কলেজের সাবিকুন নাহার, রাইসা প্রমুখ।

সভার শেষ দিকে কেএমপি কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, কেএমপির থানায় সাধারণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতি মাসেই সমন্বয়কদের নিয়ে কেএমপিতে একটি সভা হবে। প্রথমে থানাভিত্তিক পুলিশিং কমিটিতে আপনাদের প্রতিনিধিদের রাখা হবে কয়েকদিনের মধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়েও আপনাদের প্রতিনিধি থাকবে। খুলনার ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার যাতে ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এবং কোনো অজুহাত ছাড়া যাতে সেবা মেলে এখনি সে ব্যবস্থা করা হবে। অতীতে যা হয়েছে হয়েছে পুলিশ আর দলভিত্তিক বা লেজুড়বৃত্তির আচরণ করবে না। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ব্রজলাল কলেজে প্রথমে অস্থায়ী ক্যাম্প পরে স্থায়ী ক্যাম্প করব। যারা আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করছে তারা যে দলেরই হোক না কেন আমরা আপনাদের সঙ্গে থেকে নির্মোহভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও খুলনার অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তারা যদি অন্যায়ও করে তবু তাদের গ্রেপ্তারের আগে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে কথা বলব। খুমেক হাসপাতাল যদি দালাল ফড়িয়া থাকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৪
এমআরএম/এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।