ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী। এই সুযোগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানীগঞ্জ)-সহ দেশের কয়েকটি কারাগারে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে।
ভবিষ্যতে এমন ঝুঁকি মাথায় রেখে কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে বেশ কিছু সংস্কারের প্রয়োজন বলে মনে করছেন কারারক্ষী ও কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সংস্কার না করা হলে কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। এছাড়া কারারক্ষীদের মনোবল চাঙ্গা করতেও সংস্কার অতি জরুরি। এই পরিপ্রেক্ষিতে কারাগারের সংস্কার চেয়ে দেশের কয়েকটি কারাগার থেকে কারা অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১২ আগস্ট) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ কয়েকটি কারাগার থেকে এ তথ্য জেনেছে বাংলানিউজ।
চিঠিতে উল্লিখিত দাবির মধ্যে রয়েছে, কারাগারে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী জনবল বৃদ্ধিকরণ; কারাগারকে বাংলাদেশ জেল বাহিনী হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ হতে স্থানান্তর করে জননিরাপত্তা বিভাগে অন্তর্ভুক্তকরণ; কারারক্ষী হতে যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতির মাধ্যমে ডেপুটি জেলার পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যবস্থাকরণ; কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পোশাক ও র্যাংক ব্যাজ পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করন এবং প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র বিনামূল্যের সরবরাহ করণ; আজীবন রেশন সুবিধা প্রদান করা; কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান; কারারক্ষী হতে প্রধান কারারক্ষী পর্যন্ত নিজ বিভাগে চাকরির সুযোগ দেওয়া এবং দক্ষতা অভিজ্ঞতা ও মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করন।
সংস্কারের জন্য দাবির মধ্যে আরও রয়েছে, কারারক্ষীদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গমনের সুযোগ সৃষ্টিকরা; আদালতে বন্দী হাজিরা, চিকিৎসার জন্য বাইরের হাসপাতালে বন্দী প্রেরণ ও হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা প্রদান এবং এক কারাগার হতে অন্য কারাগারে বন্দী হস্তান্তরের সময় সশস্ত্র কারারক্ষীদের দায়িত্ব প্রদান। বর্তমানে শুধু হাসপাতালে বন্দি নিয়ে যায় এবং সেখানে পাহারা দেন কারারক্ষী ।
কারারক্ষীদের তরফ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, বন্দিদের হাজিরার জন্য আদালতে প্রেরণকালে এবং এক কারাগার হতে অন্য কারাগারে বন্দি স্থানান্তরকালে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হোক এবং কারাগারের বাইরে সেসব দায়িত্ব পালনকালে তাদের অস্ত্র বহন ও ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হোক। তাতে কারারক্ষীদের অস্ত্রের প্রতি ভীতি ও জড়তা কেটে যাবে এবং কারাবিভাগ শক্তিশালী হবে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও বিভিন্ন জেলার কয়েকটি কারাগার থেকে একাধিক সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের সময় নরসিংদী কারাগারে প্রথমে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলার ঘটনায় সেই কারাগার থেকে অনেক বন্দী পালিয়ে যায়। তৎকালীন সময় কারাগারে থাকা কারারক্ষী ও কর্মকর্তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। কারারক্ষীদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ থাকলেও তাদের অস্ত্র থাকতো কারাগারের অস্ত্রাগারে, কারণ পাহারার সময় কারাগারের ভেতর অস্ত্র বহন করার নিয়ম নেই। তবে শুধু কারাগারের বাইরে কারা এলাকায় অস্ত্রসহ ডিউটি করতে পারেন কারারক্ষীরা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই কয়েকটি কারাগারে বন্দিরা বিদ্রোহ করেন এবং কয়েকজন বন্দি পালিয়েও যান। কিন্তু কারারক্ষীরা সরে যাননি। তারা সেসব কারাগারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্দীদের শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তবে সেই সময় পাশে দাঁড়িয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
সূত্র বলছে, এর আগে কোনো সরকারের পক্ষ থেকে কারাগারের দিকে কেউ কোনোদিনও তাকানোর চেষ্টা করেনি। কীভাবে কারাগারে কারারক্ষী ও কর্মকর্তারা ডিউটি করছেন, তাদের কী কী প্রয়োজন আছে, কখনোই সেটা জানার চেষ্টা করেনি। এখন সুযোগ এসেছে, তাই কিছু সংস্কারের কথা জানিয়ে কারা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
এজেডএস/এইচএ/