ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শখের বানানো বাড়িতে থাকা হলো না সৌদি প্রবাসীর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪
শখের বানানো বাড়িতে থাকা হলো না সৌদি প্রবাসীর

নড়াইল: ৩৩ বছর ধরে প্রবাস জীবনে শামছুর রহমান (৫৫)। প্রবাস জীবনের কষ্টের টাকায় গড়ে তুলেছিলেন একটি শখের বাড়ি।

কিন্তু সেই বাড়িতে থাকা হলো না তার। সৌদি আরবের হাইল শহরে এক লরির থাক্কায় মৃত্যু হয় তার।

পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি শামছুর রহমানের মরদেহ যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে সরকার।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাত্র ২৫ বছর বয়সে সংসারে সচ্ছলতা আনতে প্রবাসে পাড়ি জমান নড়াইল সদরের শিংগা গ্রামের যুবক শামছুর রহমান। ১২ বছর ওমান থাকার পরে ফের পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সর্বশেষ কাজ করতেন ইয়েমেন সীমান্তের হাইল শহরে। সেখানে আল-আরাবিয়ান কোম্পানিতে কাজ করতেন।  

গত রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে রাস্তার পার্কিং এ গাড়ি রেখে কোম্পানির একটি বিলবোর্ড লাগাচ্ছিলেন। এসময় পেছন থেকে একটি লরি তার গাড়িকে ধাক্কা দিলে বিলবোর্ড ছিটকে তার মাথার ওপর পড়ে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

নিহতের ছোট ভাই জাহিদ শেখ কাঁদতে কাঁদতে বাংলানিউজকে বলেন, আমার সেজ ভাই মারা গেছেন। আমাদের পুরো পরিবারের ছায়া ছিলেন তিনি। আমরা চাই আমাদের ভাইকে দেশে এনে নিজের মাটিতে কবর দিতে। আমরা যেন ভাইয়ের কবরে যেতে পারি।

কথা ছিল, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানি থেকে অবসর নিয়ে বাড়িতে এসে ঘরের বাকি কাজ শেষ করবেন। বাড়ির সামনে একটি গরুর খামার করবেন, তার কাজও শুরু হয়েছিল। ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে নিজে বাকী জীবনটা কাটাবেন পরিবারের সঙ্গে। সব স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। স্ত্রী সাবিনা বেগম পুরোপুরি নির্বাক হয়ে গেছেন জীবনের বাকি দিনগুলোর কথা ভেবে।  

বাবার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর একমাত্র মেয়ে চাদনী একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। শুধু বলছেন ‘আব্বাকে দেখতে চাই’ এরপরই তিনি উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকেন।

দীর্ঘ জীবনে স্বামীকে কাছে না পাওয়া স্ত্রী সাবিনা বেগম বলেন, দুই বছর আগে এই মাসেই তিনি বাড়িতে ছিলেন। কত পরিকল্পনার কথা আমাকে বলেছেন। গরুর খামারটি দেখাশুনা করার দায়িত্ব থাকবে আমার ওপর। উনি কোথায় পড়ে থাকলেন, আমি একবার শেষ দেখা দেখতে চাই।

শামছুর রহমান একমাত্র ছেলে জুয়েল শেখ আক্ষেপ করে বলেন, বাবার দেওয়া টাকায় সুন্দর বাড়িটি তৈরি হচ্ছিল। বাবার নিজের পরিকল্পনা মতোই তৈরি বাড়িটি এখনও অসম্পূর্ণ। পরের বার ফিরে টাইলসের কাজ শেষ করবেন। নিজের অসম্পূর্ণ রুমের কাজও আর করা হলো না। এই বাড়িটি করতে দেনা হয়েছেন তিনি। আমাকে মালয়েশিয়া পাঠাতে ও পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে এজেন্টের কাছে। উনি দেশে এলে আমি চলে যাব, এমনই পরিকল্পনা ছিল। উনি তো আর উনার তৈরি বাড়িতেই থাকতে পারলেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।