ঢাকা: দেশে সরকার থেকে শুরু করে বদলেছে অনেক কিছু। তবে সড়কে বদলায়নি যানজটের চিত্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কের অপরিকল্পিতভাবে চলছে মোটরচালিত রিকশা বা অটোরিকশা। যে কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। সকালে অফিসযাত্রায় ও সন্ধ্যায় প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে শাখা সড়কে জ্যামের সৃষ্টি হচ্ছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর, অরজিনাল -১০ নম্বর, ১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, পূরবী বাসস্ট্যান্ড, ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, কালশী রোড ও কালশী মোড়ে এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর ১২ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনের গেটের সামনের ২-৩ লাইন করে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য মোটরচালিত রিকশা। এতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, মেট্রোরেলের স্টেশন থেকে নেমে রাস্তা খুঁজে পেতে যাত্রীরা হিমশিম খাচ্ছেন। রিকশার ভিড়ে পথে আটকে যে যার গন্তব্যে যেতে পারছেন না।
মেট্রোরেলের নিয়মিত যাতায়াতকারী সালাউদ্দিন মো. বাবর বলেন, মেট্রোরেল স্টেশন থেকে বাইরে এলে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরচালিত রিকশার কারণে প্রায়ই রাস্তা খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। আর রিকশাচালকদের কোথায় যাবেন বলে ডাকাডাকি, চিৎকার পরিবেশকে আরও অস্বস্তির দিকে ঠেলে দেয়। মোটরচালিত রিকশাচালকেরা রাস্তার কোনো নিয়মই মানছেন না। এদের একটা নিয়মের মধ্যে আনা খুবই প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মিরপুর ১২ নম্বর এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ আলিমুল হক বলেন, আমি এই এলাকায় বেশি দিন ধরে দায়িত্ব পালন করছি না। মিরপুরে গত এক সপ্তাহে যা দেখলাম যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ মোটরচালিত রিকশা। অফিস যাত্রার সময় ও সন্ধ্যায় রাস্তার জ্যাম থাকে। এ সময় পরিবহনের চাপও বেশি থাকে।
কালশী মোড়ে দেখা যায়, বিভিন্ন রুটের বাসের যাতায়াত করে এই স্টপেজ এলাকা দিয়ে। রব রব, বিজয়, বসুমতি, অসিম, নূরে মক্কা, রাজধানী নামের অনেক গণপরিবহন যাতায়াত করে এই সড়ক দিয়ে। এসব বাসকোম্পানির মালিকপক্ষ যাত্রীর সংখ্যা যাচাইয়ের জন্য লাইনম্যান নিয়োগ দিয়েছে। তবে মালিকদের কোনো সুবিধা না দিয়ে উল্টো বাসপ্রতি ১০ টাকা করে তুলতে দেখা যায় লাইনম্যানদের।
কেন বা কী কারণে লাইনম্যান টাকা নিচ্ছে সে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি বসুমতি পরিবহনের বাসচালক ও হেল্পারর। তারা জানান, দশটাকা তোলার বিষয়টি পরিবহনমালিকরা জানেন তবুও তারা কোনো ব্যবস্থা নেন না। বিষয়টা অনেকটা ওপেন সিক্রেট।
কালশী রোডে ২২ তলা স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের সামনে সন্ধ্যা ও দুপুরেও অসিম, বসুমতি ও প্রজাপতি বাস পার্কিং রাখতে দেখা যায়। এই সড়কের পূরবী সিনেমা হলমুখী (পশ্চিম দিকে) সড়কের বাসস্ট্যান্ডের যাওয়ার পথে প্রজাপতি, বসুমতি, পরিস্থান ও বিকল্প অটো সার্ভিস কোম্পানির বাস দিনের বেলায়ও পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। এই অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে এই শাখা সড়কে সকালে, বিকেলে ও সন্ধ্যায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। এছাড়াও এই সড়কের কয়েকটি ইউটার্ন বন্ধ করে দেওয়ার কারণে মোটরচালিত রিকশা জ্যাম বাঁধিয়ে রাখে।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রিন্স আহমেদ বলেন, সকালে অফিসযাত্রায় সড়কের যানজট সৃষ্টি হয় - এটা আমরা সবাই জানি। তবে মিরপুরের প্রধান সড়ক ও শাখা সড়কে যানজট সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ মোটরচালিত অটোরিকশা। আরো একটি কারণ হচ্ছে শাখা সড়কের ইউটার্নগুলো বন্ধ করে দিয়ে একটিমাত্র ইউটার্নের ব্যবস্থা রাখায় এই জ্যাম লেগে থাকে। অবশ্যই মোটরচালিত রিকশাকে একটি নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।
রিকশাচালক মো. পারভেজ বলেন, রাস্তায় যানজট সৃষ্টির অনেক কারণ আছে। মূল কারণ রাস্তায় কেউ নিয়ম মানতে চায় না। সবাই শুধু আগে যেতে চায়। আর ইউটার্ন অনেক দূরে দূরে। ইউটার্নে যানবাহনগুলো ভিড় জমায়। এই কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়।
মিরপুর-১১ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে দু-তিন লাইন করে অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে মূল সড়ক সংকুচিত হয়ে যায়। যানবাহন যাতায়াতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
পথচারী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মিরপুর-১০ও ১১ নম্বর প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয় মোটরচালিত রিকশার কারণে। এসব রিকশা প্রধান সড়কে চলাচলের কারণে যানজট লেগে থাকে। রাজধানীর সড়কে মোটরচালিত রিকশা বেড়েই চলেছে। এসব রিকশা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
মিরপুর এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতের সময় ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকার সিগন্যালে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়। সকালে অফিসযাত্রায় ও সন্ধ্যার পরে অবধারিত সিগন্যালে পড়তে হয়।
মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের দায়িত্বরত রতন ট্রাফিক পুলিশ মো. রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এই সড়কে জ্যাম বা সিগন্যাল পড়ার কারণ হচ্ছে চার রাস্তার মোড়। যদি এক-একটি রাস্তা ছাড়তে সময় নেই ৫ মিনিট। তাহলে একটি রাস্তাকে ফের ছাড়ার সিগন্যাল পেতে সময় লাগবে ১৫ মিনিট।
তিনি আরও বলেন, রাস্তায় জ্যাম লাগার অন্যতম কারণ হচ্ছে অটোরিকশা। সকালে ও সন্ধ্যার পরে এই সড়কে বেশি জ্যাম থাকে।
ট্রাফিক মিরপুর ও তেজগাঁও বিভাগ উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এ এফ এম তারিক হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, গত ৫ আগস্টের পরে সবাই স্বাধীনতা পেয়ে গেছে। আগে মোটরচালিত রিকশাচালকেরা ভিআইপি সড়কে আসতেন না। এখন আসছেন। একটি নিদিষ্ট স্থানে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে সরে এলে পরে গিয়ে দেখবেন সেখানে হাজার-হাজার রিকশা। এভাবে কত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়! অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে সময় লাগবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ট্রাফিক মিরপুর ডিসি বলেন, লাখ-লাখ অটোরিকশা সড়কে নেমেছে। নিয়ন্ত্রণে সময় লাগবে। প্রতিটি পয়েন্টে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। গত ৭ দিনে অনেক অভিযান চালিয়েছি। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে মিরপুর-১২ নম্বর পর্যন্ত কতগুলো গলি-পথ (শাখা সড়ক) আছে? আমরা সব জায়গায় ট্রাফিক দিতে পারছি না। সড়কের মেইন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ দিচ্ছি। আমাদের অভিযান চলমান থাকবে। একটা সময় রিকশাচালকরা বুঝে যাবেন যে, প্রধান সড়কে আসা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪
এমএমআই/এসএএইচ