খুলনা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে চোখ হারাতে বসেছেন নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনার শিক্ষার্থী হাসিব রহমান অভিক। তিনি ওই ইউনিভার্সিটির বিবিএর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
আহত অভিক খুলনা মহানগরীর গল্লামারী এলাকায় একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করেন। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার হামিদপুর গোডাউন পাড়ায়।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার দিনের বর্ণনা দিয়ে অভিক বাংলানিউজকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই আমি খুলনায় রাজপথে ছিলাম। পরে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে গিয়ে আন্দোলন করি। এক দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে ৫ আগস্ট আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১২টার দিকের ঘটনা এটি। মহেশপুর ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের সামনে শাপলা চত্বরের মাঝে আন্দোলনরত অবস্থায় আমি ভিড়ের মাঝে আমার ভাই এসএসসি পরীক্ষার্থী রাফাত ইমরানকে হারিয়ে ফেলি। ভাইকে হারিয়ে ফেলে আমি আরও ভীত হয়ে যাই এবং এই অবস্থায় আমি পুলিশের গুলির মাঝে পড়ে যাই। তখন আমিসহ সঙ্গে থাকা অনেকেই পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে গুরুতর আহত হই। তবে আমি ও আন্দোলনকারী অমিত বেশি আহত হই। ওই মুহূর্তে আমার বাম চোখে ও নাকে, মুখে, গলায় মোট পাঁচটা গুলি লাগে। তারপর থেকে আমি আর চোখে কিছু দেখতে পারি না। চারটা গুলি এখনো বের করা সম্ভব হয়নি।
অভিক বলেন, আমরা চোখের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায় দেড় মাস হয়ে গেলেও চোখের ভেতরের স্প্লিন্টার রয়ে যাওয়ায় ভীষণ যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ধানমন্ডির আই হসপিটালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে দেখিয়েও কোনো লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা বলেছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে। কিন্তু বাইরে চিকিৎসা করতে যাওয়ার আর্থিক অবস্থা আমার পরিবারের নেই। বিনা চিকিৎসায় গুলিবিদ্ধ চোখ স্বাভাবিক না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমাদের মতো আহতদের ত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতা আমি দুই চোখ ভরে উপভোগ করতে পারবো, যদি অন্তর্বর্তী সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহেশপুর প্রতিনিধি মো. মেহেদী হাসান বাপ্পী বাংলানিউজকে বলেন, ৫ আগস্ট দুপুরে আমার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হন অনেক শিক্ষার্থী। তার মধ্যে অভিক ও অমিতের অবস্থা বেশি গুরুতর। অভিকের চোখে-নাকে গুলি লাগে। এখন তিনি অনেকটা বিনা চিকিৎসায় ভুগছেন।
অভিকের বাবা জীবননগর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোজাফ্ফর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর পর থেকেই আমার দুই ছেলে রাজপথে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নেয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট দুপুরে পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মিছিলের ওপর গুলি করে। পুলিশের গুলি আমার বড় ছেলে অভিকের বাম চোখে, নাকে, মুখে ও গলায় লাগে। পরে আমরা সাধ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। কিন্তু এখানকার চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড অথবা সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে বলেছেন। সেখানে গিয়ে চিকিৎসা করতে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা লাগবে, যা আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনা অভিকের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। এছাড়া আর কোথাও থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। এ অবস্থায় আমি বর্তমান সরকারের কাছে সহযোগিতার আবেদন করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
এমআরএম/এসএএইচ