ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চোরকে চিনে ফেলায় নটর ডেম কলেজের অফিস সহকারীকে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪
চোরকে চিনে ফেলায় নটর ডেম কলেজের অফিস সহকারীকে হত্যা

ঢাকা: নটর ডেম কলেজের অফিস সহকারী লিপিকা গোমেজ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।  

সংস্থাটি বলছে, হত্যায় অভিযুক্ত জুয়েল রানার (২১) ধারণা ছিল, লিপিকার বাসায় বিপুল পরিমাণে অর্থসম্পদ রয়েছে।

সেগুলো লুট করতেই ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করেন জুয়েল ও তার বন্ধু নজরুল (২২)। পরে লিপিকা জুয়েলকে চিনে ফেলায় লোহার পাইপ দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সদরঘাট ও পুরান ঢাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)।  

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পশ্চিমাঞ্চলের ডিআইজি সায়েদুর রহমান।  

ডিআইজি সায়েদুর রহমান জানান, পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানার ৭৫ নং ঋষিকেশ দাস রোডের একটি বাসা থেকে ঢাকা নটর ডেম কলেজের অফিস সহকারী লিপিকা গোমেজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত লিপিকা গোমেজ ১৮ বছর আগে তার স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের পরে একাই বসবাস করতেন। তার কোনো সন্তান ছিল না। গত ১০ সেপ্টেম্বর লিপিকা গোমেজ সর্বশেষ অফিস করেন। পরেরদিন কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও লিপিকার সন্ধানে কলেজের দুই স্টাফ জনি ও জয়দেবকে তার বাসায় পাঠান।

ডিআইজি আরও জানান, নটর ডেমের দুই স্টাফ জনি ও জয়দেব লিপিকা গোমেজের বাসায় গিয়ে কেয়ারটেকার মিতুকে নিয়ে বাসায় গিয়ে খাটের ওপরে তার মরদেহ দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে সূত্রাপুর থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তার মাথায় বাম পাশে ভোঁতা অস্ত্রের আঘাত (কাটা দাগ) ও বিছানায়, বালিশে জমাট বাধা রক্ত দেখা যায়।  

এ ঘটনায় নিহতের মামাতো ভাই প্রিন্স গোমেজ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। ছায়া তদন্তের একপর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত সন্দেহে জুয়েল ও নজরুলকে আটক করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দেন। তাদের দেওয়া তথ্যমতে হত্যায় ব্যবহৃত একটি নোজ প্লাস, দুটি স্ক্রু ড্রাইভার এবং চুরি যাওয়া বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়।

আসামিদের বরাত দিয়ে ডিআইজি সায়েদুর বলেন, গ্রেপ্তার জুয়েল নজরুলদের মেসে খেতেন। সেখান থেকেই তাদের পরিচয় এবং ৭ থেকে ৮ বছরের বন্ধুত্ব। জুয়েল নজরুলকে জানান যে, তার পাশের বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় একজন নারী একা থাকেন। তার কোনো স্বামী-সন্তান নেই। তার বাসায় চুরি করলে অনেক টাকা-পয়সা পাওয়া যাবে।

পরিকল্পনা মোতাবেক জুয়েল তার স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে রাত ১১টার দিকে নজরুলকে সঙ্গে নিয়ে লিপিকার বাসায় যান। রাত আনুমানিক ১টার দিকে নজরুল ছাদের ওপর দিয়ে এসে রশির সাহায্যে ঝুলে ভিকটিমের বাসার পেছনের ভেন্টিলেটর ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। নজরুল বাসার মেইন দরজা খুলে ছাদে গিয়ে জুয়েলকে ডেকে আনেন। তারা একত্রে বাসায় চুরি করার সময় লিপিকা চিৎকার করলে নজরুল একটি লোহার পাইপ দিয়ে তার মাথায় সজোরে আঘাত করেন এবং জুয়েল রানা বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে।

জুয়েল ও নজরুল উভয়ই লিপিকা দুটি মোবাইল ফোন, হাত ব্যাগ নিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে জুয়েলের বাসায় চলে যান। হাত ব্যাগে থাকা ২৬ হাজার ৩৫০ টাকা ভাগ করে নেন। ভোরে নজরুল বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসায় চলে যান। পরে মোবাইল ফোন দুটি সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, লিপিকা গোমেজ হত্যা ও তার বাসায় প্রবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে নটর ডেম কলেজের একাধিক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে, কলেজের কাউকে সন্দেহভাজন পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪
এমএমআই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।