ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধনযোগ্য নয়, সম্পূর্ণ বাতিলযোগ্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৪
সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধনযোগ্য নয়, সম্পূর্ণ বাতিলযোগ্য

ঢাকা: দেশে সাইবার ‘নিরাপত্তা’ আইন নামে আইনের প্রয়োজন নাই তবে সাইবার সুরক্ষা আইন নামের নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে। বিগত স্বৈরাচার সরকার যে নিপীড়নমূলক আইন নাগরিকদের বিরুদ্ধে করেছে তার ব্যবহার বন্ধ করে নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন সাইবার সুরক্ষা আইন করতে উদ্যোগী হতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।

মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আইন: জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ক্ষমতা একটা গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে পড়লে অসুবিধা হয় না কিন্তু সরকার অগণতান্ত্রিক হলে তখন আইনের অপপ্রয়োগ হয়। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনের যে বিধানগুলো অপপ্রয়োগ করা হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে বাতিল করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, উপদেষ্টাদের সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধন বিষয়ক প্রস্তাবগুলোকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে, আমরা এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু একই সঙ্গে বিগত সরকারের সময়কালের মতো আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং অভ্যন্তরীণ গণমাধ্যম কর্মীরা, লেখক, গবেষক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আইনজীবী, মানবাধিকার ও ডিজিটাল অধিকার কর্মীরা অন্তর্বর্তী সরকারের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের অধিকার এবং সাইবার পরিসরে অধিকার বাস্তবায়নের বাস্তবতা ও সুরক্ষা দিতে নীতি-নৈতিকতা ও কর্মকাণ্ড সবই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ-পর্যালোচনা করতে চাই। বিশেষ করে কেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনটি বাতিল করা প্রয়োজন এবং আগামীতে কেমন আইন-বিধি ও নীতিমালা প্রস্তুত করা প্রয়োজন সেই বিষয়েও নজর দিতে চাই। এক্ষেত্রে, আমরা এবং আমাদের মতামত অনেক বৃহৎ ও ভিন্ন অংশীজনের মধ্যে ক্ষুদ্র, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

সাইবার নিরাপত্তা আইনটি কেন বাতিলযোগ্য এমনটি জানিয়ে বক্তারা বলেন, বিগত সরকার নাগরিকদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত আলোচনা ব্যতীত, তাড়াহুড়া ও গণদাবি উপেক্ষা করে, বাতিলকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রায় একই আদলে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ নামে নতুন আরেকটি গণবিরোধী আইন প্রণয়ন করেছিল। আইনটি নিপীড়নমূলক চর্চা বজায় রেখে তা এখনও কার্যকর রয়েছে। একই সঙ্গে, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নাগরিকদের জানিয়েছিলেন, বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়ন হলেও আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত পাঁচ বছরে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই মামলাগুলো চলবে। মুক্ত গণমাধ্যম ও ডিজিটাল অধিকার কর্মী হিসেবে আমরা অকম্পিত দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, বর্তমান সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলযোগ্য, কোনোভাবেই সংশোধনযোগ্য নয়; কেননা সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া ছিল অবৈধ এবং বেআইনি।

সাইবার নিরাপত্তা আইন জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমনটি জানিয়ে বক্তারা বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনে শিশু-কিশোরদের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে কোনো বিধান রাখা হয়নি, ফলে দিনাজপুরের কিশোরী দীপ্তি রানি দাশকে দেড় বছর মহিলা ও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কাটাতে হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ২০১৩ সালের নতুন করে শিশু আইন প্রণয়ন করেছে এবং সেই আইনের বিধান মতে কোনো অভিযুক্ত শিশুকে শাস্তি দেওয়ার কোনো প্রকার আইনগত সুযোগ নেই। অথচ সাইবার নিরাপত্তা আইনের নামে ব্যাপকভাবে শিশুদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকার ভঙ্গ করে গ্রেপ্তার করে বিচার করা হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা আইন স্পষ্টত জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বক্তারা আরও বলেন, গণঅধিকার হরণ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বাড়ানো এবং নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে, সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকার অনেকগুলো নতুন আইন-নীতিমালা খসড়া এবং পুরাতন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল। এই আইনগুলো প্রণয়ন প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নে নাগরিকদের অংশগ্রহণ এবং দায়বদ্ধতা ছিল শূন্য থেকে মহাশূন্যময়; প্রস্তাবিত আইন-নীতিমালাগুলো সংশোধন ও প্রণয়নে এবং পর্যালোচনার সময় ও সমতার সুযোগ ছিল অপর্যাপ্ত এবং অপরিচ্ছন্ন, যার নেতিবাচক ফল সরাসরিভাবে মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের সংগঠনগুলো এবং কর্মীরা ভোগ করেছেন, এখনও করছেন এবং সামনের দিনগুলোতে আরও করবেন বলে আমরা মনে করি।

এ সময় বক্তারা বলেন, নাগরিকদের অংশগ্রহণে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে যেসব সাইবার সংক্রান্ত আইনগুলো মামলার মধ্যে মৌলিক মানবাধিকারের বিরুদ্ধে আঘাত করেছে সেই সব মামলাগুলো অচিরে বাতিল করতে হবে; অবশ্যই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২৪
ইএসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।