ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাজশাহীতে আনন্দ অশ্রুতে চলছে প্রতিমা বিসর্জন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
রাজশাহীতে আনন্দ অশ্রুতে চলছে প্রতিমা বিসর্জন

রাজশাহী: শারদীয় দুর্গোৎসব শেষে রাজশাহীর পূজামণ্ডপগুলোয় বাজছে বিদায়ের সুর। চোখের জলে চলছে প্রতিমা বিসর্জন।

রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুর থেকে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে আনন্দ অশ্রুতে প্রতিমা বিসর্জন করা হচ্ছে। আর এজন্য নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।

বিজয়া দশমীর নানান আয়োজন ও উপচারে সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের পাঁচ দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হচ্ছে আজ।

সনাতন ধর্ম মতে- আজ দশভুজা দেবী দুর্গা মর্ত্যলোক ছেড়ে স্বর্গশিখর কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে গেল। তবে আবারও ভক্তদের কাছে দিয়ে গেলেন আগামী বছর ফিরে আসার অঙ্গীকার। তাই আবারও মর্ত্যলোকে ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায় ভক্তরা অশ্রুসিক্ত চোখে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাচ্ছেন। আর এজন্য এক দিকে যেমন বিদায় ও বিচ্ছেদের সুর বাজছে অন্যদিকে আবারও ফিরে আসার আনন্দ কাজ করছে ভক্তকূলের মাঝে।

হিন্দু শাস্ত্রমতে, শনিবার (১২ অক্টোবর) পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবে মহানবমীর লগ্ন শেষ হয়। আর এরপর পরই শুরু হয়ে যায় বিজয়া দশমীর লগ্ন। মূলত দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা সেদিন শেষ হলেও বিসর্জন দেওয়া হয় আজ।

সনাতন শাস্ত্রের বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, এ বছর দেবী দুর্গা দোলায় (পালকি) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) এসেছেন। এর ফলে মড়ক, মহামারি ও দুর্যোগ বাড়বে।  

আজ বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে আবারও কৈলাশে (স্বর্গে) ফিরে যাচ্ছেন গজে (হাতি) চড়ে। আর এর কারণে শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে এই বসুন্ধরা।

হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বিজয়া দশমীতে রাজশাহীর পদ্মা নদীর মুন্নুজান ঘাটে শুরু হয়েছে ঘট বিসর্জন ও প্রতীমা নিরঞ্জন।

রোববার দুপুর থেকে ট্রাক, পিকআপভ্যানে করে একের পর এক প্রতিমা নিয়ে পদ্মাপাড়ে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এই বিদায়যাত্রায় ঢাকের তালে তালে নেচে উঠছেন ভক্তরা।

আর মহানগরীর মন্নুজান স্কুলের সামনে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। বিসর্জনের জন্য প্রতিমা এলেই সুশৃঙ্খলভাবে দেবী দুর্গাকে নামিয়ে আনছেন তারা। এরপর সাত পাক ঘোরানোর পর দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে পদ্মায়। এ সময় ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে পুরো এলাকায় অন্যরকম এক আবহ তৈরি হচ্ছে।

দুপুর থেকেই মহানগরীর পূজামণ্ডপ থেকে একে একে ঘাটে আসতে শুরু করেছে প্রতিমা। নৌকায় তুলে প্রতিমা ঘুরিয়ে করা হয় নিরঞ্জন। এর আগে মণ্ডপ থেকে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানো হয়। নানান উদ্বেগ ও আশঙ্কা কাটিয়ে এবারও বড় পরিসরেই শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করলেন সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ। বিজয়া দশমীর শেষ দিনে তাই নির্বিঘ্নে প্রতিমা বিসর্জন শেষ করতে মহানগরীর পদ্মা নদীর মুন্নুজান, পঞ্চবটি, আলুপট্টি, ফুদকিপাড়া ও বড়কুঠি ঘাটে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিসর্জনের সময় উচ্চস্বরে মাইকের ব্যবহার ও গান বাজানো হচ্ছে না। এলাকাগুলোতে টহল দিচ্ছে পুলিশ ও র‌্যাব।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন- রাজশাহী মহানগরীর মুন্নুজানসহ প্রতিটি ঘাটেই আজ রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নদীতে গোয়েন্দা ও নৌ পুলিশের বিশেষ বহরসহ রয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আরএমপি সদর দপ্তরের কন্ট্রোলরুম থেকে পুরো বিসর্জন কার্যক্রম এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে রাজশাহী মহানগরীর কুমারপাড়া, আলুপট্টি, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এবার সেভাবে সময়সীমা নির্ধারণ না করলেও রোববার রাতেই বিসর্জন শেষের কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।