ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২৪
কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার

ঢাকা: এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। ছাত্রলীগের মতো আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কি না, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীরও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ওই প্রশ্নের উত্তরে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এই মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো নিয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে কোনো আপডেট নেই। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে আমাদের উপদেষ্টারা বলেছেন, সরকার যথোপযুক্ত সময়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

রাষ্ট্রপতি বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ অবস্থান কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর কেউ কেউ কথা বলছেন। আমাদের আগের একটি অবস্থান আছে। উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটি কনসালটেশন হবে। এই কনসালটেশনে কি সিদ্ধান্ত হয়, সেটা আপনারা (সাংবাদিক) পরবর্তীতে জানবেন। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে৷ এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে আসার চেষ্টা চলছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আশা করছি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উৎখাত হওয়া প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা শেখ হাসিনার অডিও রেকর্ড ফাঁসের বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিবকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অডিও রেকর্ডের ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন না দেখে আমরা বলতে পারবো না। অনেক সময় হয় যে হুবহু কণ্ঠ নকল করা যায়। সেই জায়গায় এটা যে একটি অথেনটিক অডিও সেটি বোঝা কঠিন। সেটা না হলে আমরা এই বিষয়ে বলতে পারছি না।

এর আগে উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আজকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ আরও কয়েকজন উপদেষ্টা গণভবন পরিদর্শন করেছেন। এটা প্রধান উপদেষ্টার প্রথম গণভবন পরিদর্শন। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও উপদেষ্টাদের নির্দেশ দিয়েছেন, কীভাবে গণভবনকে জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড বা বিপ্লব বা তার পরবর্তী রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের স্মৃতি হিসেবে জাদুঘরে পরিণত করা যায় এবং কত দ্রুত কাজটি শেষ করা যায়।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, আর্কিটেক্ট বা প্রকৌশলীদের কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি আয়না ঘরের একটি রেপ্লিকা যাতে সেখানে রাখা হয়- সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আয়না ঘরে বন্দীদের কি ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে সেটি মানুষ গণভবন পরিদর্শন করলে জানতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, আজ প্রধান উপদেষ্টা দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেছেন। একজন ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ এসা আল দুহাইলান। তারা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে কথা বলেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের তরুণ সমাজের স্কিল কীভাবে উন্নত করা যায় এবং এই স্কিল উন্নত করার ফলে দুই দেশই উপকৃত হবে, সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া সৌদি আরবের বাদশা ও প্রিন্সের দুটি চিঠি প্রধান উপদেষ্টার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।

এ সময় রাষ্ট্রদূত সৌদি এসা ইউসুফ এসা আল দুহাইলান বলেছেন, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য সৌদি আরবের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। প্রধান উপদেষ্টাও সৌদি রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, এটাই ‘আসল’ বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার উপযুক্ত সময়।

আয়না ঘর ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিষয়ে এক প্রশ্নের প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব বলেন, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি, আমাদের রাষ্ট্রের অনেক নাগরিককে গোপন বন্দীশালায় রাখা হয়েছিল এবং নির্যাতন করা হয়েছিল। এই নির্যাতনের সঙ্গে অনেকে জড়িত। কারা এর সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে জড়িত সেটি তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন আছে। সেই কমিশন এটি তদন্ত করে দেখবে। এখানে কোনো বাহিনীকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়নি এবং এককভাবে দায়ী করা হয়নি। এর জন্য কেউ ব্যক্তিগত বা সামষ্ঠিকভাবে দায়ী হলে তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনা হবে, এই অঙ্গীকার অনেক আগেই বর্তমান সরকার জানিয়েছে। সেই আঙ্গিকেই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

৫ আগস্টের পর অনেকে আয়না ঘর থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তারপরও অনেকে এখনও গুম আছে, অনেকের খোঁজ এখন পরিবার পায়নি। তাদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে কি না? জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এ বিষয়ে যে কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা পুরোদমে কাজ করছে৷ সারাদিন এমনকি বন্ধের দিনেও তারা কাজ করছেন। যে লোকগুলো নিখোঁজ হয়েছে বলে এতদিন আমরা জানতাম, এখন তার থেকে বেশি মানুষ নিখোঁজের তথ্য জানা যাচ্ছে। কমিশন এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখছে। দেশে কতগুলো আয়না ঘর ছিল, এটা নিয়েও কাজ করছে। প্যানেল যখন পুরো প্রতিবেদন দেবে, আপনারা জানতে পারবেন।

আয়না ঘর থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আয়না ঘরের বিষয়ে কমিশন কাজ করছে। তারা তাদের কাজ শেষ সুপারিশ দেবে৷ তখন সরকার সেই সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেবে।

জনপ্রশাসন সচিবের অনিয়মের বিষয়ে যে তদন্ত চলছে সেটার বিষয়ে জনতে চাইলে তিনি বলেন, এটার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমরা এখনো পাইনি। এখানে কিছু ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন আছে। যে সমস্ত প্রমাণের কথা আসছে, সেগুলো সত্য কিনা সেটি যাটাই করার বিষয় আছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আমরা আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানাবো।

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২৪
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।