ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দারিদ্র্যকে হার মানিয়ে এখন সবার প্রেরণা সাফজয়ী আইরিন 

তৌহিদ ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২৪
দারিদ্র্যকে হার মানিয়ে এখন সবার প্রেরণা সাফজয়ী আইরিন 

নওগাঁ: প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে সাফজয়ী নারী ফুটবল টিমের খেলোয়াড় আইরিনের পরিবার। দরিদ্র পরিবারে জন্ম আর অজপাড়া গাঁয়ে বেড়ে ওঠা আইরিন খাতুন এখন সবার প্রেরণা।

 

তাকে নিয়ে আশার আলো দেখছে স্বজন ও প্রতিবেশীরা। গ্রামের শান্ত পরিবেশেই জ্বলে উঠেছে আইরীন। খেলাধুলা করেছেন গ্রামের মাঠে। দরিদ্রতাকে পেছনে ফেলে করেছেন কঠিন পরিশ্রম। কোনো বাধাই তাকে থামাতে পারেনি। আইরিনের সাফল্যের ঝুড়িতে এখন দ্বিতীয়বারের মতো সাফজয়ীর সফলতা।  

নওগাঁর সাগরইল গ্রামের দরিদ্র আব্দুল আলিম ও ফিরোজা বেগমের একমাত্র মেয়ে আইরিন। ছোট বেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল তার গভীর মিতালী। এরপর মাঠ দখল। একের পর এক শিরোপা ঘরে তুলেছে তিনি। খেলেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বেশিরভাগ ম্যাচই জিতে ফিরেছেন আইরিন।

সাফজয়ী আইরিনের মা ফিরোজা বেগম বাংলানিউজকে জানান, অভাবের সংসারে বড় হয়েছে আইরিন। তবে ছোট বেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ বেশি তার। যেখানেই খেলা সেখানেই চলে যেত আইরিন। পড়াশোনা পাশাপাশি খেলাধুলায় মনোযোগ ছিল তার বেশি। সংসারের উপার্জনকারী একমাত্র তার বাবা। সকালে ঘর থেকে বাহিরে যায় কাজে থেকে ফিরে রাতে। এভাবেই চলছে আমাদের সংসার। অভাবের সংসারে আইরিনকে ফুটবল কিনে দিতে পারতাম না। মাঝে মধ্যেই ফুটবল না পেয়ে কান্নাকাটি করতো সে। বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীর কাছে টাকা ধার করে ফুটবল কিনে দিতাম তাকে।

তিনি আরও জানান, গ্রামে খেলাধুলার জন্য মেয়ে বন্ধু পেত না আইরিন। যার ফলে ছেলে বন্ধুদের সঙ্গেই খেলতে হতো তাকে। এ নিয়ে হাজারও কথা শুনতে হয়েছে পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে। তারপরও মানুষের কটু কথা পেছনে ফেলে মেয়েকে সাহস দিয়েছি। মাঝে মধ্যে মনে হয়েছে মেয়ের খেলা বন্ধ করে দেই। কিন্তু আইরিনের ইচ্ছাশক্তির কাছে আমরা হার মেনেছি। রংপুর রাজশাহী নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাঠের বাইরে বসে আইরিনের খেলা দেখেছি। মুগ্ধ হয়েছি, তার খেলা দেখি আরও সাহস দিয়েছি। আজ আমার মেয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এমন একটি দিনের অপেক্ষায় থাকতাম। আজ এই আনন্দ শুধু আমার নয় সারা দেশের। আইরিন বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছে।

স্থানীয়দের দাবি, মাঠে আইরিনের নৈপুণ্য ক্রীড়ামোদীদের মুগ্ধ করে। কিন্তু পরিবারের দারিদ্র্যতা ও সমাজের কটু কথায় ফুটবলে পা রাখাটাই কঠিন ছিল। অনুশীলন করতে যেতে হতো আট থেকে ১০ কিলো মিটার দূরে। কিন্তু কিছুতেই তাকে দমাতে পারেনি। সাগরইল থেকে নেপাল। দেশের হয়ে সুনাম বয়ে আনায় উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে এলাকা জুড়ে। আইরিনের পরিবারকে সহযোগিতার দাবি জানাই।

মহাদেবপুর উপজেলার হাতুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক জানান, আমাদের ছোট আইরিন আজ অনেক বড় খেলোয়াড় হয়েছে। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আমরা ছোট বেলা থেকেই তার খেলা দেখেছি। অনেক কষ্ট করেছে আইরিন। আজ তার এই কষ্ট সাফল্যে পরিণত হয়েছে। আপাতত আইরিন ঢাকায় ব্যস্ত রয়েছেন। তবে গ্রামে ফিরলে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। চলছে সেই প্রস্তুতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।