ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বরিশালে মানবপাচার মামলায় তিনজনের কারাদণ্ড

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৪
বরিশালে মানবপাচার মামলায় তিনজনের কারাদণ্ড

বরিশাল: বরিশালে মানবপাচার আইনের দুটি ধারায় দুই ভাই ও তাদের একজনের স্ত্রীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের জরিমানাও করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বরিশাল মানবপাচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সোহেল আহমেদ এ রায় দেন।

দণ্ডিতরা হলেন—বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রাহুতকাঠি এলাকার বাসিন্দা মো. হারুন অর রশিদের ছেলে কাতার প্রবাসী জসিম উদ্দীন হাওলাদার, তার স্ত্রী জান্নাতুর রহমান যূথী ও ছোট ভাই ভানুয়াতু প্রবাসী পলাশ হাওলাদার।

তাদের মধ্যে দুই ভাই জসিমউদ্দীন ও পলাশকে পৃথক দুই ধারায় যাবজ্জীবন ও ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া যূথীকে দুই ধারায় ১৭ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লিয়াকত আলী খান ও এসএম সরোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।

রায় ঘোষণার সময় শুধু যূথী এজলাশে উপস্থিত ছিলেন। অন্যরা পলাতক বলে জানিয়েছেন বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা।

মামলার বাদী বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেন।

মামলার বরাতে বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা বলেন, মামলার প্রধান সাক্ষী সজল জমাদ্দার ও বাদী মোফাজ্জেল একই এলাকায় ব্যবসা করতেন। ব্যবসার সুবাদে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এর জেরে সজল জানান, তার খালাতো ভাই পলাশ হাওলাদার কিউবা থাকেন। তাকে কিউবা নিয়ে যাবেন। সজলের প্রস্তাবে পলাশের সঙ্গে কথা বলে মাসে ৮০ হাজার টাকা বেতনে মোফাজ্জেলও কিউবা যেতে রাজি হন। শর্ত অনুযায়ী সজল ও মোফাজ্জেল কথিত কিউবা প্রবাসী পলাশের ভাই জসিম উদ্দীন ও তার স্ত্রীকে মোট ২১ লাখ টাকা দেন। ওই টাকা দেয়ার পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর কলকাতা, দিল্লি, সিঙ্গাপুর ও ফিজি হয়ে ভানুয়াতু পৌঁছোন তারান। সেখানে পলাশ তাদেরসহ মোট ১০ জনকে নিয়ে একটি নির্জন বাসায় আটকে রাখেন। পরে সেখান থেকে অষ্ট্রেলিয়া নেওয়ার প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পলাশের ভাইসহ স্বজনদের আরও ৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের অস্ট্রেলিয়া পাঠানো হয়নি।

ভানুয়াতুতে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকার পর কয়েকজন পুলিশের কাছে ধরা দেন। পরে পুলিশ পলাশকে গ্রেপ্তার করেন। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেওয়া ১০৩ জনকে উদ্ধার করে পুলিশ।

পরে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশনের তত্ত্বাবধানে দেশে ফিরে আসেন তারা। দেশে ফিরে টাকা ফেরত চাইলে আসামিরা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। এ ছাড়াও তাদের খুন জখমের হুমকি দেন। ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর মানবপাচার আইনে বরিশাল মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন মোফাজ্জেল হোসেন। মামলায় ৭ জনকে আসামি করা হয়।

বেঞ্চ সহকারী বলেন, এর মধ্যে দুজনকে বাদ দিয়ে ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার কাজ সম্পন্ন করা হয়। বিচারক ২৩ জনের মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য নিয়ে রায় দিয়েছেন।

রায়ে জসিম উদ্দীন ও পলাশকে মানবপাচার অপরাধ দমন আইনের ৬ ধারায় ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অনাদায়ে ২০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ৭ ধারায় জসিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অনাদায়ে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া যূথীকে ৬ ধারায় ৭ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ৭ ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা ভুক্তভোগীদের দেয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

মামলার অপর দুই আসামি হারুন অর রশিদ ও এনামুল হক সুপ্রিম কোটের হাইকোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল মিসকেসের আদেশের রুল নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাদের বিচার কাজ স্থগিত রয়েছে।

মামলার রায়ে বাদী মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, মামলার রায় যদি কার্যকর হয়, তাহলে তিনি খুশি হবেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মান্নান জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৪
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।