ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নির্বাচনী অপরাধে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা উচিত: বদিউল আলম মজুমদার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২৪
নির্বাচনী অপরাধে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা উচিত: বদিউল আলম মজুমদার

ঢাকা: বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে যারা নির্বাচনী অপরাধ করেছে তাদের সবাইকেই বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রজাতন্ত্রের যেসব কর্মচারী নির্বাচনী অপরাধ করেছে তাদের বিচারের জন্য সুস্পষ্ট আইন রয়েছে।

তবে শপথ ভঙ্গ করে যেসব নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী অপরাধে জড়িত ছিলেন তাদের বিচার কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নির্ধারণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার।  
 
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর এফডিসিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রার্থী ও নাগরিকের ভূমিকা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এ মন্তব্য করেন।  

অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। এ প্রতিবেদনের আলোকে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা যেতে পারে। নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করা এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। তবে নিবার্চন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য জরুরি সংস্কারের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে এবং সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় দেয়া উচিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোটার তালিকা সংশোধন ও হালনাগাদ করা জরুরি। জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা যেতে পারে। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের স্বার্থে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধের উপায় বের করতে হবে। আগামী নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ থাকবে না, তাই কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে বলে আশা করা যায়।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজন করা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। কিন্তু এ ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে তা জনগণ জানতে পারলে ভালো হয়। বর্তমান সরকারের বিবেচনায় নেয়া উচিত নির্বাচন বিলম্বিত হলে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু হওয়ার পাশাপাশি সরকারকে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে না জাতীয় নির্বাচন আগে এই ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ করা জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কথা বলা হচ্ছে। এতে বেশ সময় লাগতে পারে। তবে এনআইডি হাল নাগাদ থাকলে পৃথক ভোটার তালিকার প্রয়োজন আছে কি না তা ভেবে দেখতে হবে। এসব নানামুখী জল্পনা—কল্পনার মধ্যে জাতীয় নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে তা কিন্তু এখনো স্পষ্ট নয়।  

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব বাড়লে সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে পারে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোকেও জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ হয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে তাদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। শুধু নির্বাচন দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। এখনো বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে দেশি বিদেশি শক্তি তাদের অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সংখ্যালঘু ধমীর্য় কার্ড ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে এসব অপশক্তিরা। তবে আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে দেশকে ধ্বংস করে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে তাদের বাংলাদেশের মানুষ অতি সহজে গ্রহণ করবে বলে মনে হয় না। তাই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত রাজনীতি অন্ধকার।

এ দেশে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল পতিত সরকার। বাংলাদেশে শতভাগ ভোট পেয়েও নির্বাচিত হওয়ার নজির রয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের ভোট প্রদানের ঘটনাও ঘটেছে। পতিত সরকারের অধীনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাকশালী কায়দায় একতরফা নির্বাচন হয়েছিল। আমি আর ডামি, দিনের ভোট রাতে ও একতরফা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ  এ দেশে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। বন্দুকের নলে নির্বাচনকালে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ছিল। যাতে ভিন্ন মতের কেউ নির্বাচনের মাঠে আসতে না পারে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটকক্ষে ডাকাত ছিল। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ডাকাতরা নিজের ইচ্ছা মতো সিল মেরে পতিত সরকারের পক্ষে ভোটের বাক্স ভরেছে। তাই গত তিনটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতদের সহযোগিতাকারী নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন, রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ নির্বাচনী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।  

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের চেয়ে প্রার্থীসহ জনগনের ভূমিকাই বেশি’ শীর্ষক ছায়া সংসদে কবি নজরুল সরকারি কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক একরামুল হক সায়েম, সাংবাদিক সাইদুর রহমান, সাংবাদিক মশিউর রহমান খান। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২৪
এমএমআই/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ