ঢাকা: মামলায় নাম থাকলেই গ্রেপ্তার করে ফেলতে হবে, তা আইনে নেই। পুলিশ বিনা যুক্তিতে, বিনা তদন্তে, পাইকারি হারে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) পুলিশ সদরদপ্তরের হল অব ইন্টেগ্রিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।
এই পরিস্থিতিতে অনেক মিথ্যা ও গায়েবি মামলা হচ্ছে। মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে অনেক নিরীহ মানুষের কাছে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। এসব বিষয় মনিটরিংয়ের আওতায় আসবে কি না, জানতে চান এক সাংবাদিক।
জবাবে আইজিপি বলেন, পুলিশ ও সরকার প্রথম থেকেই বলে আসছে, কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে উদ্ভূত অনেক ঘটনায় অনেক মামলা হয়েছে এবং কোনো কোনো মামলায় আসামির সংখ্যা অনেক, যার মধ্যে অনেক নিরীহ লোকজন রয়েছে।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলো, এসব মামলাকে কেন্দ্র করে অনেকে বাণিজ্য করছে। তারাও সমাজের প্রভাবশালী লোক, যারা নিরীহ মানুষদের আচ্ছন্ন করে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছে, প্রতারিত করছে, টাকা নিচ্ছে। আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা এই ধরনের প্রতারণায় প্রতারিত হবেন না।
অপরাধে জড়িত না থাকার পরও মামলায় যাদের নাম এসেছে, তাদের সরাসরি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন পুলিশ প্রধান। তিনি বলেন, যদি আপনার কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকে, আপনারা সরাসরি পুলিশের কাছে আসুন। আমরা বিনা যুক্তিতে, বিনা তদন্তে, পাইকারি হারে কাউকে গ্রেপ্তার করব না।
তিনি আরও বলেন, মামলায় নাম থাকলেই গ্রেপ্তার করে ফেলতে হবে, এটি আইনেও নেই। যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হবে, আপনি এ ঘটনায় জড়িত অপরাধী। অন্যথায়, একজন পুলিশ অফিসার আইন অনুযায়ী কখনোই কাউকে গ্রেপ্তার করার কথা নয়। আমরা মামলার যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেব, সেখানে যিনি নিরীহ, তিনি অবশ্যই বাদ যাবেন এবং তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য ধাওয়া করব না।
জঙ্গি আখ্যা দেওয়া অনেকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর জামিনে ছাড়া পেয়েছেন, খালাস পেয়েছেন- এ ই বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আদালত যদি কাউকে জামিন বা খালাস দিয়ে থাকেন, সেটিই চূড়ান্ত। আমরা সেটিকে শ্রদ্ধা করব। এর বাইরে আমরা অন্য কিছু বলতে যাব না।
কিছু পুলিশ কর্মকর্তা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেন। তারা কোথায় এবং তাদের বিষয়ে পুলিশের পদক্ষেপ কী- জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, আমাদের তদন্ত চলমান। প্রত্যেকের অবস্থান আমরা এখনো বের করতে পারিনি। যদি তারা দেশের ভেতরে থাকেন এবং তাদের অবস্থান আমরা শনাক্ত করতে পারি, তাহলে অবশ্যই তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। যদি তারা বাইরে থাকেন, সেক্ষেত্রেও বিধিগত প্রক্রিয়া আছে। আমরা তাদের বিষয়ে কাজ করছি।
জঙ্গি হামলা হতে পারে, এমন কারণ দেখিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্ক করেছে। এমন কোনো আশঙ্কা আছে কি না, জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, এমন কোনো শঙ্কা আমরা দেখছি না। আমরাও যুক্তরাজ্যের এ সতর্কবার্তা দেখেছি। আমি মনে করি তাদের ইন্টেলিজেন্স আমাদের থেকে ভালো৷ যে কারণে আমরা এ নিয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি এবং সজাগ রয়েছি।
আনসার আল ইসলামের নেতা সৈয়দ জিয়াউল হককে ধরিয়ে দিতে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। পুলিশ কি একই জায়গায় আছে?- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এক ডিআইজি বলেন, আমাদের লিগ্যাল স্ট্যাটাস আগের মতোই আছে। আদালত থেকে তার মামলার খালাস বা কিছু এখন পর্যন্ত হয়নি। তিনি যদি খালাস হন, তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। আর যদি অভিযুক্ত হন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২৪
এসসি/আরএইচ