গাইবান্ধা: ৮ ডিসেম্বর গাইবান্ধার পলাশবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল এ উপজেলা।
জানা যায়, গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ পলাশবাড়ী পিয়ারী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যাপক হাসান আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তোফাজ্জল হোসেনকে আহ্বায়ক ও ওমর ফারুক চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন মরহুম আজিজা এমপি।
এই কমিটি ১৪ মার্চ স্থানীয় ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাবে একটি শিবির খোলে এবং পাকিস্তানি পতাকার স্থলে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।
১২ মার্চ ঢাকা থেকে রংপুরগামী হানাদার বাহিনীর গাড়ি চলাচলে বাধা সৃষ্টির জন্যে রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়। এতে হানাদাররা ক্ষিপ্ত হয়ে কালীবাড়ী হাটের নিরীহ হাঁটুরেদের ওপর বেধড়ক গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে গিরিধারীপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান এবং দুজন বাঙালি পুলিশসহ নাম না জানা আরও অনেকে শহীদ হন এবং গিরিধারীপুরের রজব আলী নামে যুবক পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পরদিন পলাশবাড়ী আক্রমণ করে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। ২৮ মার্চ দুপক্ষের সংঘর্ষে ২১ জন শহীদ হন।
পলাশবাড়ী থানা সদরের সড়ক ও জনপথের (সওজ) ডাক বাংলোয় হানাদারদের ক্যাম্প (সিঅ্যান্ডবি) বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যাযজ্ঞসহ গ্রাম থেকে নারীদের ধরে এনে ধর্ষণ অব্যাহত রাখে। সে সময় পলাশবাড়ীতে ৬৫ জন সাহসী বীর সন্তান সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ চলাকালে ফরহাদ রব্বানীর ছেলে গোলাম রব্বানী, সাঁতারপাড়ার ইমান আলীর ছেলে আঞ্জু মণ্ডল, পবনাপুরের আব্দুল লতিফ, হেলাল উদ্দিন সরকারের ও আবুল কাশেম, আব্দুল করিম প্রধান সাঁতারপাড়াসহ ২৬ জন শহীদ হন। দেশের অন্যান্য এলাকার মতো পলাশবাড়ীতেও মুক্তিযোদ্ধা ও পাকস্তানি হানাদারদের লড়াই অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে ৮ ডিসেম্বর পলাশবাড়ী শক্রমুক্ত হয়।
তবে, দিবসটি ঘিরে এ বছর ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিকতা। কোনো কর্মসূচির আয়োজন করেনি উপজেলা প্রশাসন বা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড।
এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, এবার কোনো র্যালি বা আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়নি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান জানান, সার্বিক পরিস্থিতিতে দিবসটি উপলক্ষে এবার কোনো কর্মসূচির আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু আলা মওদুদ বলেন, দিবসটি পালন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন বা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড থেকে কোনো আমন্ত্রণপত্র পাইনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২৪
এসআরএস