ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে চাঁদাবাজির কারণে: ডিএমপি কমিশনার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৪
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে চাঁদাবাজির কারণে: ডিএমপি কমিশনার

ঢাকা: রাজধানীতে এখনো চাঁদাবাজি হয় জানিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিনট পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, আপনারা (ঢাকাবাসী) চাঁদা দেবেন না। যারা চাঁদা নিতে আসে, তারা কি করে আমরা (ডিএমপি) দেখতে চাই।

চাঁদাবাজির জন্য নিত্যপণ্যের দাম পর্যন্ত বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে আমি কাজ করছি। আপনারা অচিরেই দেখবেন এক্ষেত্রে অনেকটা উন্নতি হয়েছে।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর এ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের সামনে ডিএমপি কমিশনার।

ব্রিফিংয়ের শুরুতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মেট্রো মেট্রোপলিটন পুলিশ ওই আন্দোলনে পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে যে কাজ করে, সে কাজের জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং দেশবাসীর কাছে এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তথা বাংলাদেশ পুলিশ নতুনভাবে মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওই সময়ে যে সমস্ত পুলিশ অপেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করেছে, তাদের বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়েছে এবং অনেকের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা নতুনভাবে যে কাজ শুরু করেছি, সেজন্য ঢাকাবাসীর সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঢাকা শহরে কম-বেশি দুই কোটি মানুষের বসবাস। পৃথিবীতে এত ঘনবসতিপূর্ণ শহর আর আছে বলে আমার জানা নেই। আমাদের এ ঢাকা শহরে নানাবিধ সমস্যা আছে। সীমিত সংখ্যক রিসোর্স ও পুলিশ কর্মকর্তা নিয়ে আমাদের দুই কোটি লোকের নিরাপত্তা বিধান করতে হয়৷ আমার ও আমার সহকর্মীদের দায়িত্ব ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখা।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মহানগরীর অনেক সমস্যার মধ্যে প্রধানতম সমস্যা ট্রাফিক ব্যবস্থা। এ শহরের রাস্তাঘাট অত্যন্ত সীমিত। একটি আদর্শ শহরের রাস্তার পরিমাণ থাকা উচিত ২৫ শতাংশ। আমাদের শহরের রাস্তা আছে মাত্র ৭ শতাংশ। আবার এ রাস্তায় মোটরযান ও পায়েচালিত রিকশা চলে। ইদানিং ব্যাপক পরিমাণে অটোরিকশা চলছে। গত সরকারের সময়ে অটোরিকশাকে অনুমতি দেওয়ার কারণে হু হু করে অটোরিকশার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অটোরিকশার সংখ্যা যদি রোধ করা না যায়, অচিরেই আপনারা এমন একটি ঢাকা শহর পাবেন, যেখানে আপনি বাসা থেকে বের হলেই আর কোনো নড়াচড়ার সুযোগ থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, পায়েচালিত রিকশা থেকে অটোরিকশার আকার প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু রাস্তার জায়গা অনেক সীমিত। এ সীমিত জায়গা অটোরিকশা দখল কর নিবে এবং মানুষের চলাচল একদম বন্ধ হয়ে যাবে৷ তাই সরকারের সঙ্গে আমি এ বিষয়টি আলাপ করেছি এবং একটি ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনার জন্য অনুরোধ করেছি।

শেখ মো. সাজ্জাত আলী আরো বলেন, ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত বিশৃঙ্খল। যারা রাস্তা ব্যবহার করেন, তারা ট্রাফিক আইন মানতে চান না। অন্যদিকে হকাররা ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবহার করছে। এরূপ অবস্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে৷ আমি যোগদানের পর থেকে ট্রাফিকের ওপর যথেষ্ট মনোনিবেশ করেছি। আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন, আগে যে হারে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য মামলা করা হতো, এখন সে মামলা দ্বিগুণ গতিতে করা হচ্ছে। এটার অর্থ এ নয়, আমি একজন ট্যাক্স কালেক্টর, ভ্যাট কালেক্টর, মামলা করে আমি রাজস্ব আদায় করছি। সেটা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার উদ্দেশ্য ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা।  

রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করতে ঢাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ঢাকাবাসীর সহযোগিতা ছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হবে না। আমি আপনাদের (ঢাকাবাসী) সহযোগিতা কমানা করি। ট্রাফিকের এ অব্যবস্থাপনার জন্য যারা রাস্তা ব্যবহার করেন, তাদের অবশ্যই ট্রাফিকের আইন-কানুন মেনে চলতে হবে। তাহলে যানজট অনেকটা লাঘব করা সম্ভব হবে।

স্কুল-কলেজের সামনে ব্যাপক আকারে যানজট লাগে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকাবাসীর কাছে আমার অনুরোধ, সন্তানদের স্কুল-কলেজের কাছে আপনারা বাসা ভাড়া নিন। আপনারা হাঁটা রাস্তার মধ্যে বসবাস করার চেষ্টা করেন। যাতে হেঁটে সন্তানকে স্কুলে বা কলেজে নিতে পারেন। একইভাবে কর্মক্ষেত্রও বাসার কাছে রাখার চেষ্টা করেন। আপনাদের এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সহযোগিতা আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় একটি বড় অবদান রাখবে।

ইদানিং ঢাকা শহরে ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা ছিনতাই প্রতিরোধের জন্য ডিবি এবং থানা পুলিশকে সক্রিয় করেছি। যাতে ছিনতাই রোধ করা সম্ভব হয়।

তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের ঘটনার পরে পুলিশ যে পরিমাণ নিস্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল, সেটা থেকে আমরা উত্তরণ হতে সক্ষম হয়েছি৷ আশা করছি, সবার সহযোগিতায় আমরা অচিরেই ডিএমপিকে সচল করতে সক্ষম হবো। আমি ঢাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করতে একটি প্রোগ্রাম শুর করেছি। প্রতিটি থানায় মতবিনিময় সভা হচ্ছে। আমরা ঢাকাবাসীর মতামত নিয়ে পুলিশের সেবা দিতে চাই। তবে অনেক ক্ষেত্রে ঢাকাবাসীর সহযোগিতা ছাড়া আমাদের পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৪
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।