নীলফামারী: উত্তরের জনপদ নীলফামারী জেলায় জেঁকে বসেছে শীত। সূর্য আকাশ ভেদ করে উত্তাপ ছড়াতে পারছে না।
জেলায় গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে সারারাত ও পরদিন বেলা ১১টা পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকছে পুরো জনপদ। সকালের ফ্লাইটগুলো কুয়াশার কারণে অবতরণে শিডিউলে বিঘ্ন ঘটছে। এতে দূরদূরান্তের যাত্রীদের সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এসে আকাশ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এদিকে শীতের তীব্রতায় জেলার অভাবী, গরিব ও অসহায় মানুষগুলো কষ্ট পাচ্ছেন। এখনও সরকারি-বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়নি। জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে।
গুলিস্তান বলে পরিচিত সৈয়দপুরে সবচেয়ে বড় পুরোনো কাপড়ের বাজারে গরম কাপড় কিনতে আসা জাহানারা বেওয়া (৬৭) বলেন, ‘গরম কাপড় নিবার জন্য খানসামার পাকেরহাট থাকি আইলছু। কিন্তু যে দাম যায়ছে তাতে মোর কাপড় কেনা হইবে না। জারত হামার গরিব মানুষের মরণ ছাড়া উপায় নাই’।
জেলার সৈয়দপুর শহরের বার্মাসেল এলাকার রিকশাচালক জোবায়ের (৪৫) বলেন, ‘সকালের দিকে আর সন্ধ্যা থেকে শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে। সকালে কুয়াশা আর শীতটা বেশি থাকে। প্রয়োজন থাকলেও সকালে বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। কামাই-ধামাই কমে গেইছে’।
শীত ও কুয়াশায় স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জে বসবাসরত শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এসব রোগে। ক্রমেই রোগীর ভিড় বাড়ছে নীলফামারী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতাল ও অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে।
নীলফামারী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও আগুনে পুড়ে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত শিশুদের গরম কাপড়, গরম পানি ও গরম খাবার খাওয়াতে হবে। সমস্যা বেড়ে গেলে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নিতে হবে। শীত নিবারনে মায়েদের সচেতন থাকতে হবে।
নীলফামারী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আব্দুর রহিম বলেন, শীতের তীব্রতায় মানুষ সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, হাঁচির মতো লক্ষণ রয়েছে। ডায়রিয়াসহ অ্যাজমা রোগীর প্রচুর ভিড় হচ্ছে। শীতের তীব্রতা বাড়লে রোগীর সংখ্যাও বাড়বে এটা স্বাভাবিক।
তিনি আরও বলেন, এসব রোগে সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং যাদের অ্যাজমা, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে তাদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। গরম কাপড় পরতে হবে। শরীরে শক্তি জোগায় এমন খাবার খেতে হবে। আর জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নীলফামারী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু আল হাজ্জাজ জানান, শীতের কারণে শিশুরা ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছে। তুলনামূলকভাবে বয়স্ক নারী-পুরুষরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি শিশুদের পর্যাপ্ত শীত বস্ত্র পরানো ও সকাল-সন্ধ্যায় ঘরের বাইরে বের না করার পরামর্শ দিয়েছেন। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু রোগীদের প্রচুর ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে।
সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরে এ অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রির নিচে অবস্থান করছে। মধ্যরাত থেকে ঘনকুয়াশায় ঢাকা পড়ছে এ অঞ্চল। গোটা জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। সামনের দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। প্রতিদিনের চলাচলকারী ফ্লাইটগুলোর শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৪
আরবি