ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সেবায়েত বা পাহারাদার নয়, তরুণ দাস ছিলেন ভবঘুরে: মহাশ্মশানের সাধারণ সম্পাদক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
সেবায়েত বা পাহারাদার নয়, তরুণ দাস ছিলেন ভবঘুরে: মহাশ্মশানের সাধারণ সম্পাদক ছবি: সংগৃহীত

নাটোর: নাটোরের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে হত্যাকাণ্ডের শিকার তরুণ কুমার দাসকে কেউ ‘মন্দিরের সেবায়েত’, কেউ ‘পাহারাদার’ বলে খবর ছড়ালেও ওই শ্মশানের কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তরুণ দাস শ্মশানে কর্মরত কেউ নন, তিনি ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে।

পুলিশ বলছে, তরুণ কুমার দাসের হত্যা রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আসামিদের চিহ্নিত করে খুব দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে বলে তারা আশাবাদী।

গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে নাটোরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে তরুণ কুমার দাস (৫৮) নামে ভবঘুরে ওই ব্যক্তির হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি শহরের আলাইপুর ধোপাপাড়া এলাকার মৃত কালীপদ দাসের ছেলে।

নাটোর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সত্য নারায়ণ রায় টিপু বাংলানিউজকে বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দাস ভবঘুরে জীবনযাপন করতেন। প্রায় প্রতি রাতে মহাশ্মশানের রান্নাঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকতেন। নাটোর পৌরসভার অর্থায়নে শ্মশানে চারজন কর্মচারী নিয়োজিত থাকলেও তরুণ দাস শ্মশানে কর্মরত কেউ ছিলেন না।

 সত্য নারায়ণ বলেন, শনিবার রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মহাশ্মশানে ঢুকে ভবঘুরে তরুণ দাসকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করে ভাণ্ডার কক্ষ থেকে কাঁসার পাতিল, গামলাসহ কাঁসা এবং পিতলের কিছু মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তরুণ দাসকে অনেকবার শ্মশানে রাত্রিযাপন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি, কিন্তু তিনি শোনেননি, নিজের মত করে তিনি জীবনযাপন করতেন।

মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দাসকে রাস্তায় কুকুরের সঙ্গেও খাবার ভাগাভাগি করে খেতে দেখা গেছে।  ছবি: সংগৃহীততরুণ কুমার দাস মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানান তার ভাই প্রদীপ দাসও।

তরুণ কুমারের ছেলে তপু কুমার দাস বাংলানিউজকে বলেন, বাড়িতে বাবা আসতেন, অনেকদিন দুপুরের খাবার খেতেন, তার প্রিয় নাতনি ছোট্ট তিন্নির সঙ্গে খেলতেন, চলে যেতেন। ঠাণ্ডা শীতের রাতে শ্মশানের বারান্দায় রাত কাটানোর ব্যাপারে বাবা বলতেন, তার শীত লাগে না। ওই এলাকার সবাই তাকে শ্মশান বাবু নামেই জানতেন। তিনি ছিলেন সংসার ত্যাগী।

নাটোর পৌরসভার প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দাসকে নাটোর শহরের সব মানুষই চিনতো। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আবোল-তাবোল বক্তৃতা দিতে দেখেছি তাকে। মাঝে-মাঝেই কুকুরের সঙ্গে খেলা করা, কুকুরের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়ার ঘটনাও আমরা সবাই দেখেছি। হত্যাকাণ্ডের পর কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণকে শ্মশানের পাহারাদার, আবার কেউ কেউ সেবায়েত, আবার পুরোহিত হিসেবে উল্লেখ করেছে, এটা সঠিক নয়।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তরুণ দাসকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে তাকে ‘মন্দিরের দেখভাল ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত’ বলে উল্লেখ করলেও এই সংগঠনের নাটোর জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট খগেন্দ্র নাথ রায় বাংলানিউজকে বলেন, বিবৃতিতে তরুণ দাসের পরিচয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।  

সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথকে বিবৃতি সংশোধন করার জন্যও তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মহাশ্মশানটি এতটা নির্জন এলাকায় যে, নাইটগার্ড থাকলেও চুরি বা ডাকাতির উদ্দেশ্যে কেউ এলে তার ভাগ্যেও তরুণের মতো ঘটনাই ঘটতো।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, হত্যাকাণ্ড তদন্তের জন্য রাজশাহী থেকে সিআইডি এবং ক্রাইম সিন ইউনিট এসেছে। জেলা পুলিশও কাজ করছে। আশা করা যাচ্ছে-খুব শিগগির এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন হবে।

জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হুসাইন বলেন, আসামিদের চিহ্নিত করে খুব দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো বলে আশা করছি।

আরও পড়ুন: শ্মশানঘাটে চুরির ঘটনাকে ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা’ বলে প্রচার

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।