ঢাকা, সোমবার, ২২ পৌষ ১৪৩১, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করে সম্মাননা পেলেন ১২ পুত্রবধূ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৫
শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করে সম্মাননা পেলেন ১২ পুত্রবধূ

মাদারীপুর: মাদারীপুরে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করায় ১২ পুত্রবধূকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। ব্যতিক্রমধর্মী এ সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘পাশে আছি মাদারীপুর’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

এ সম্মাননা পুরস্কার পেয়ে আনন্দিত পুত্রবধূরা। আয়োজকদের দাবি, সমাজে বর্তমানে পারিবারিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে এ ব্যতিকর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে মাদারীপুর সমন্বিত সরকারি অফিস ভবনের জেলা শিশু একাডেমির হলরুমে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ‘পুত্রবধূ ও শ্বশুর-শাশুড়ির ঐকান্তিক অনবদ্য ও চিরায়ত সম্পর্কের বন্ধনে’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে সেরা ১২ পুত্রবধূকে সম্মাননা দিয়েছে সংগঠনটি।

পাশে আছি মাদারীপুরের প্রতিষ্ঠাতা বায়জীদ মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম মুন্সী, আবৃত্তি সংগঠন মাত্রা’র সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন লিটন, নিরাপদ চিকিৎসা চাই এর মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান পারভেজ।

আয়োজকদের সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর ডাসার উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামের মৃত জোনাব আলী হাওলাদার ও মেহেরুন্নেসা বেগমের ছেলে মৃত অহিদুল হাওলাদারের স্ত্রী মোসা. মরিয়ম অহিদ। তিনি জনপ্রতিনিধি। ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মহিলা সংরক্ষিত আসন ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। স্বামী মারা গেলেও শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়েই এক সঙ্গে থেকে তিনি তাদের সেবা যত্ন করছেন।  

মাদারীপুর শহরের ২ নম্বর শকুনি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন খান ও মৃত রিজিয়া সুলতানার ছেলে রাজন মাহমুদের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা আকাশী। তিনি একজন মিডিয়াকর্মী। তিনি নিজের কাজের পাশাপাশি শ্বশুরকে নিজ হাতে খাওয়ানোসহ সব সেবা যত্ন করে থাকেন।

অন্য সম্মননাপ্রাপ্ত পুত্রবধূরা হলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের মধ্য পেয়ারপুর গ্রামের সৈয়দ আলী মাস্টার ও মাহমুদা বেগমের ছেলে মাসুদুর রহমানের স্ত্রী রাবেয়া রহমান মুক্তা, মাদারীপুর শহরের মাস্টার কলোনি এলাকার আনোয়ার হোসেন ও রাশিদা বেগমের ছেলে রেজওয়ানের স্ত্রী রিমা, মাদারীপুর শহরের উকিলপাড়া এলাকার আশ্রাফ আলী ও সাহানা বেগমের ছেলে এহসানুল হক মামুনের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার, মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া এলাকার আ. রব জমাদার ও শামীমা বেগমের ছেলে আরাফাত ইসলামের স্ত্রী সামসুন নাহার, মাদারীপুর শহরের ২ নম্বর শকুনি এলাকার কাজী হাফিজুর রহমান ও রহিমা খাতুনের ছেলে কাজী হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আরিফা আফরোজ অন্তরা, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়নের মুক্তিসেনা রোড এলাকার হায়দার আলী খান ও কহিনুর বেগমের ছেলে সাকিন খানের স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া, মাদারীপুর সদর উপজেলার গৌরবর্দী এলাকার আ. আজিজ মিয়া ও ফিরোজা বেগমের ছেলে বি এম মহিউদ্দিনের স্ত্রী মিসেস ফারজানা, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়নের পূর্ব পাচখোলা গ্রামের আলী আকবর মোড়ল ও নাদিরা বেগমের ছেলে আ. সোবহান মোড়লের স্ত্রী আছমা খাতুন, মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার চর বদরপাশা গ্রামের মো. নওসের ও আম্বিয়া বেগমের ছেলে মো. আমির এর স্ত্রী সাবিকুন্নাহার আক্তার, মাদারীপুর শহরের মাস্টার কলোনির শেফালী বেগমের ছেলে আজাদ চৌকিদারের স্ত্রী লাবনী আক্তার আশা। তারা সবাই গৃহিণী।

আয়োজক বায়জীদ মিয়া বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজে পরিবারগুলো ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। আবহমান বাংলার যে ঐতিহ্য একান্নবর্তী পরিবার সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতেই এই বিশেষ সম্মাননা পুরস্কারের আয়োজন করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই কমিটি মাদারীপুরের ২৩ জন পুত্রবধূর মধ্যে থেকে সেরা ১২ জন পুত্রবধূকে মনোনীত করে। আজ এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই সেরা ১২ পুত্রবধূকে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সেরা পুত্রবধূ লাবণী আক্তার আশা বলেন, এই সম্মাননা স্মারক পেয়ে আমরা আনন্দিত। আগামীতে আমরা শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের সবার প্রতি আরও যত্নবান হবো। এ পুরস্কার প্রাপ্তি দেখে সমাজের অন্যান্য গৃহবধূরাও অনুপ্রাণিত হবেন বলে আশা করছি।

সম্মাননাপ্রাপ্ত আরিফা আক্তার অন্তরার শ্বশুর কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, এই সম্মাননার আয়োজন করায় আমরা খুব খুশি। শুধু পুত্রবধূদের একার দায়িত্ব না, শ্বশুর-শাশুড়ি-পুত্রবধূ-ছেলে সবাই মিলেমিশে যে যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করাই হচ্ছে সবার কর্তব্য। আমার পুত্রবধূ সব সময় আমাদের খেয়ার রাখেন, যত্ন নেন। আমরা এক সঙ্গে থাকি। তবে বর্তমান সমাজে শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে কেউ থাকতে চান না। ছেলের বিয়ের পর আলাদা হয়ে যায়। তাই এ আয়োজনের মাধ্যমে অন্যপুত্রবধূরাও উৎসাহ পাবেন। তারা তাদের শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে এক সঙ্গে থেকে তাদের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করবেন। আশা করছি এই আয়োজন প্রতিবছরই অনুষ্ঠিত হবে।

সম্মাননাপ্রাপ্ত সামসুন নাহারের শাশুড়ি শামীমা বেগম বলেন, পুত্রবধূ সম্মাননার মতো এমন আয়োজন আর কোথাও করতে শুনিনি। এটি ব্যতিক্রম আয়োজন। তবে বর্তমান সমাজে এ আয়োজনের দরকার আছে। কারণ বর্তমানে কেউ শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে এক সঙ্গে থাকতে চান না। কোনো না কোনো উসিলা দিয়ে আলাদা হয়ে যায়। এটা একজন মা-বাবার জন্য কতাটা কষ্টকর, তা বোঝানো যাবে না। তবে আমরা সবাই এক সঙ্গে থাকি। তাই এই আয়োজন দেখে সমাজের আরও পুত্রবধূরা শ্বশুর-শাশুড়িকে সেবা করবেন, যত্ন নেবেন, এক সঙ্গে থাকবে বলে আশা করছি।

আয়োজক বায়জীদ মিয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সমাজে পরিবারগুলো ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। আবহমান বাংলার যে ঐতিহ্য একান্নবর্তী পরিবার সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতেই এ বিশেষ সম্মাননা পুরস্কারের আয়োজন করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই কমিটি মাদারীপুরের ২৩ জন পুত্রবধূর মধ্যে থেকে সেরা ১২ জন পুত্রবধূকে মনোনীত করে। আজ এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই সেরা ‘১২ পুত্রবধূকে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তারুণ্য পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা সোহাগ হাসান বলেন, ‘মাদারীপুরে এই সেরা ১২ জন পুত্রবধূকে সম্মাননা পেতে দেখে অন্যান্য পুত্রবধূ ও শশুর শাশুড়িরাও অনুপ্রাণিত হবেন। তাই এই ব্যতিক্রম আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৫
আরআইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।