ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

চার খাটিয়া উঠানে, লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৫
চার খাটিয়া উঠানে, লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা

টাঙ্গাইল: বাড়ির উঠানে চারটি খাটিয়া সাজিয়ে রাখা হয়েছে। স্বজনরা অপেক্ষায় আছেন লাশ আসবে কখন।

একই পরিবারের চারজনকে হারিয়ে নিহতের স্বজনরা হতবাক।  

এদিকে বাড়ির ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিকী (১১) এখনও জানে না তার বাবা, মা, বড় ভাই এবং খালা আর বেঁচে নেই।

নিহতরা হলেন- ভবন দত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এএইচ ফারুক সিদ্দকী, তার স্ত্রী মহসিনা খন্দকার, ছেলে মোহাইমিন সিদ্দিকী ফুয়াদ ও স্ত্রীর বড় বোন সীমা খন্দকার।  

পরিবারের সদস্যরা জানান, বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী কিছুদিন থেকে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে গেছে। চিকিৎসার জন্য গত রাতে ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকীসহ পরিবারের চার সদস্য অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। গত রাত ৩টার দিকে সাভারে বাসের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষ হয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা একই পরিবারের চারজন নিহত হন।

ঘাটাইল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান তালুকদার বলেন, লাশগুলো এখনো ঢাকায় রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাড়িতে আনার পরে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হবে।  

নিহত ফারুখ হোসেন সিদ্দিকীর ছোট ভাই মামুন সিদ্দিকী বলেন, তারা তিন ভাই এক বোন। বোন সবার বড়। ইতালি প্রবাসী। বড় ভাই ফারুখ সিদ্দিকী ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী স্থানীয় ভবনদত্ত গণ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। হঠাৎ করেই কিছুদিন থেকে সে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে যায়। তবে থ্যালাসেমিয়া নয়। ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর জন্য গত রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা থেকে ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী ও তার বোনকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশে। ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন ফারুখ সিদ্দিকী।

মামুন সিদ্দিকী জানান, রাতে তার কাছে ফোন করে সবাইকে দোয়া করতে বলেন। এরপর আর কথা হয়নি।

ফারুখ সিদ্দিকীর সহকর্মী মো. রুবেল মিঞা বলেন, প্রধান শিক্ষক খুব নীতিবান মানুষ ছিলেন। এমন একজন মানুষের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খবর পেয়ে আমরা সবাই এসেছি। এমন শিক্ষক আর হবে না। আমাদের সবসময় আগলে রাখতেন।  

নিহত ফারুখ সিদ্দিকীর আরেক সহকর্মী তার চাচাতো বোন সোমা সিদ্দিকী বলেন, স্যারের ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিকী হোস্টেলে থেকে মাদরাসায় পড়ে। সে এখনো জানে না তার বাবা-মা আর ভাই পৃথিবীতে নেই।  

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হেপলু জানান, রাতে তিনি ফারুখ সিদ্দিকীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে বাড়ি আসেন। একসঙ্গে চা পান করেছেন একসঙ্গে। তার ভাষ্য এলাকায় ফারুখ সিদ্দিকীর মতো ভালো মানুষ আর হবে না। তার মৃত্যুতে কাঁদছে পুরো গ্রামের মানুষ।

** চলন্ত অ্যাম্বুলেন্সে বাসের ধাক্কায় আগুন, নিহত ৪

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।