যশোর: সাজ সাজ রব পড়েছে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত যশোরের সাগরদাঁড়িতে।
আগামীকাল (২৪ জানুয়ারি) থেকে এখানে অনুষ্ঠিত হবে মধুমেলা।
২৪ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
মেলা কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। মেলাপ্রাঙ্গণ সাজছে রঙিন সাজে। মধুমঞ্চ থেকে শুরু করে স্টল-সব কিছুতেই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। বলা যায় পুরো সাগরদাঁড়িকেই সাজানো হচ্ছে বর্ণিল সাজে। আশপাশের এলাকার বাড়িগুলোতে আসতে শুরু করেছেন আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধবেরা।
বুধবার দেখা যায়- সাগরদাঁড়িতে মধু ভক্তরা আসতে শুরু করেছেন। এসব ভক্ত কবির স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের পাড়, জমিদার বাড়ির আম্রকানন, বিদায় ঘাট, মধুপল্লিতে আশ্রয় নিয়েছেন। মেলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকা মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মেলামঞ্চে প্রতিদিন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও রাজনীতিকরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া, মেলামঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও ব্যবস্থা রয়েছে বরাবরের মতো।
মেলায় আগত শিশু-কিশোরসহ সাধারণ মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য এবারও থাকছে নানা আয়োজন। তার মধ্যে সার্কাস, নাগরদোলা, চরকি, যাদু ও মৃত্যুকূপ। তবে মেলা কেন্দ্র করে অতিরিক্ত মুনাফা লোটার আশায় মেলায় অশ্লীলতার যে অভিযোগ উঠেছিল এবার তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
মধুমেলায় স্টল বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা সাজাতে শুরু করেছেন। এসব স্টলে কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পপণ্য, খেলনা, গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় উপকরণ, পোশাকসহ নানা পণ্য ওঠানো হচ্ছে। ওইসব স্টল ঘিরে এরই মধ্যে উৎসুক মানুষের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে।
আলোকচিত্রী তাহেরুজ্জামান তাছু জানান, মধুমেলা উপভোগ করতে প্রতি বছর সাগরদাঁড়িসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে ঘরে ঘরে আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতি দেখা যায়। এবারও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। এলাকার অনেক বাড়িতে এখন বাইরের আত্মীয়রা অবস্থান নিয়েছেন। অনেক পরিবারে মেয়ে-জামাতা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। আবার বাইরের স্বজনদের দাওয়াত দিয়েও এই সময়টিতে নিয়ে আসেন কেউ কেউ।
মধুপল্লীর কাস্টডিয়ান হাসানুজ্জামান বলেন, মধুমেলা উপলক্ষে মধুপল্লী সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। দর্শনার্থীদের কবির ভাস্কর্য, প্রসূতিস্থল, কাছারিবাড়ি, স্মৃতি বিজড়িত আসবাবপত্র ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র দেখানোর ব্যাপারে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘সাগরদাঁড়িতে মধুমেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মধুমঞ্চে সপ্তাহব্যাপী কেশবপুর ও যশোরের সংস্কৃতি সংগঠনসমূহের সঙ্গে দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা অংশ নেবেন’।
তিনি জানান, এবারও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকেল মধুসূদন পদক দেওয়া হবে। মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসন ব্যাপক তৎপর থাকবে। দর্শনার্থীদের মধুমেলা উপভোগ করতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তার সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
আরএ