ঢাকা: সংস্কারের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কৌশল পরিবর্তনের সুপারিশ করেছেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা। নাগরিক সংলাপে অংশ নিয়ে তারা বলেছেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ইনসাইটস (ইনস্টিটিউট অব ইনোভেশন ফর জেন্ডার অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান ট্রান্সফরমেশন) ও নাহাব (ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাক্টরস বাংলাদেশ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা সংস্কারের অগ্রাধিকার’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন নাহাবের সভাপতি মো. রফিকুল আলম।
ইনসাইটস ও নাহাবের উপদেষ্টা মো. এহসানুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন ইনসাইটসের উপদেষ্টা সুমন আহসানুল ইসলাম।
মূল বক্তব্যে ইনসাইটসের উপদেষ্টা সুমন আহসানুল ইসলাম বলেন, দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অপেশাদার কর্মকর্তারাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা একটি বিশেষায়িত কাজ। যারা এ বিষয় বোঝেন, তাদেরই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় থাকা উচিত। এ গবেষণা নতুন ও সামষ্টিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের মুখোমুখি অংশীজনদের জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যাতে দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষের জন্য আরও ভালো ফলাফল অর্জন করা যায়।
তিনি আরও বলেন, গবেষণার ফলাফলে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা শক্তিশালী করা, স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিনিয়োগ, সমর্থন ও সুযোগ দেওয়া, তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজন পূরণের জন্য সমন্বিত সমষ্টিগত পদ্ধতি গ্রহণ এবং সমাজের সব স্তরের মানুষের কথা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তুলে ধরার সুপারিশ করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রফিকুল আলম বলেন, মানবিক সহায়তা ব্যবস্থার চাহিদা পূরণের সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে নানা টানাপোড়েন ও প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন সরকারের প্রেক্ষাপটে মানবিক সংস্কারের অগ্রাধিকার পূরণে সমষ্টিগত পদ্ধতির প্রতি আগ্রহ ও গতিশীলতার একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করলেও এ পরিবর্তনকালীন সময়টি জটিল। তাই অংশীজনরা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ও সরকারের অভ্যন্তরে স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্যোগবিষয়ক গবেষক আব্দুল লতিফ খান বলেন, আমরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পাশাপাশি রাজনৈতিক জটিলতার মধ্যে আছি। দুর্যোগ মোকাবিলা মানেই ত্রাণের বিষয়টি গুরুত্ব বুঝি। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থা একটি বৃহৎ বিষয়। আবার ত্রাণ তহবিল ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। আমরা পাঁচ বছর আগেই এ সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারের কথা বলেছি। কিন্তু সেটা হয়নি। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা বাড়লেও তা ঝুঁকি বাড়ার তুলনায় খুবই কম।
মো. এহসানুর রহমান বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কৌশলের যে বিষয়গুলোতে আমাদের পরিবর্তন আনা দরকার, সেই জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে গবেষণা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, গবেষকদের সঙ্গে বাস্তবায়নকারীদের দূরত্ব কমানোর জন্য এ গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে মানবিক সংস্থা ও সরকার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবর্তিত কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে সংকটপীড়িত সমাজের সুরক্ষা ও সহায়তা নিশ্চিত করার বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সুপারিশ উঠে এসেছে। গবেষণার ফলাফল কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
আইএফআরসি মেহেদি হাসান শিশির বলেন, আমরা শুধু আইন দেখি, নিজেদের দায়িত্ব দেখি না। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সবকিছু নিরাপদ আছে কিনা তা দেখি না। এতে আমি নিজের ক্ষতি করছি, অন্যের ক্ষতি করছি। সচেতনতার সঙ্গে দৃশ্যমান শাস্তি দরকার। যেখানে মানুষ সচেতন হবে এবং আইন মানতে বাধ্য হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্যোগ সংক্রান্ত কারিকুলামগুলো পর্যালোচনার আহ্বান জানান তিনি।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন- অ্যাকশনএইডের উম্মুল খায়ের তিথি, ইনসাইটসের নিগার রহমান, রিপোর্টার জান্নাতুল ফেরদৌসি, শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
টিএ/আরবি